শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক

এবার পরীক্ষার ফাঁদে কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা!

বিশেষ প্রতিনিধি

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এস আলম নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলো থেকে গণহারে কর্মী ছাঁটাই করা হয়। বিশেষ করে যে সকল কর্মী স্থায়ী হননি তাদের ছাঁটাই করা হয়। তবে এবার বিশেষ পরীক্ষার নামে নতুন কৌশলে স্থায়ী কর্মীদেরও ছাঁটাই চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি এই পরীক্ষা দেশব্যাপী কয়েকটি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা রুখে দিতে সক্ষম হন কর্মীরা। তারা আজ এই পরীক্ষার প্রতিবাদে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সারাদেশে নিজ নিজ শাখায় কর্মবিরতি পালন করেন। এতে ব্যাংকে লেনদেনের সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
জানা গেছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে কর্মবিরতি পালন করা কর্মকর্তাদের মূল দাবি দুটি। এর একটি বিশেষ মূল্যায়নের নামে ভূয়া ও অযৌক্তিক পরীক্ষা বাতিল করা এবং বিনা কারণ ও বিনা নোটিশে কাউকে চাকরিচ্যুত না করা।
ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতি এছাড়া আরও যেসব দাবি ওঠে এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে— বিভিন্ন সময় নানা কাজের বাহানা দিয়ে এমপ্লয়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, বছরের ১৫ দিন ক্যাজুয়েল লিভ নেওয়ার সময় ম্যানেজার ও ম্যানেজার অপারেশনদের গড়িমসি বন্ধ করা, ক্যাম্পেইন, ডিপোজিট ও একাউন্ট বাড়ানোর নামে এমপ্লয়ীদের দিয়ে ওয়াকফ্, মোহর ও নানা একাউন্ট করানো বন্ধ করা, প্রতি বছর ব্যাংকের মুনাফার ওপর এমপ্লয়ীদের ইনসেনটিভ চালু করা, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত ৫৪৫ জন কর্মকর্তাকে পুর্নবহাল করা, ৫ আগস্টের পর প্রতিটি শাখার কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ম্যানেজমেন্ট কর্তৃক মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করা, নানা রিপোর্ট চাওয়ার নামে হেড অফিসের মানসিক টর্চার বন্ধ করা, বছরের সব বোনাস ও নানা সুযোগ সুবিধা শতভাগ নিশ্চিতকরণে মানবসম্পদ বিভাগকে নতুন সার্কুলার প্রণয়ন করা।
জানা গেছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ প্রায় তিন হাজার (অ্যাসিসট্যান্ট অফিসার থেকে শুরু করে সিনিয়র অফিসার পর্যন্ত পদের) স্থায়ী কর্মকর্তার কাছ থেকে নতুন করে মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি আড়াই ঘণ্টার এই পরীক্ষা দেশের মোট ১০টি জোনে নির্ধারিত কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নর্থ ও সাউথ জোনের কর্মকর্তাদের পরীক্ষা হবে চট্টগ্রাম নগরীর জুবিলী রোডের মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল ও কলেজে। ১০০ নম্বরের ২০টি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ন্যূনতম ৪৫ নম্বর পেতে হবে।
কর্মবিরতি পালন করা ব্যাংক কর্মীরা অভিযোগ করেন, যারা বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন, তাদেরকে গণহারে ছাঁটাই করার একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সকালে ঢাকায় ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে কর্মবিরতি পালনকারী কর্মকর্তাদের তোপের মুখে পড়েন ব্যাংকের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) সিরাজুল ইসলাম। তিনি এ সময় কর্মকর্তাদের কাজে ফিরে যেতে বললেও কর্মকর্তারা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখেন।
এছাড়া কর্মীরা আরো জানান, শুক্র-শনিবার ছুটির দিনেও মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের নামে অতিরিক্ত ডিউটি করানো হচ্ছে, যা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রস্তুতির কোনো সুযোগ না দিয়েই ২২ ফেব্রুয়ারি নির্দিষ্ট পাসমার্কের মাধ্যমে বিশেষ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। অথচ এটা গণছাঁটাইয়ের কৌশল মাত্র। তারা এ ধরনের কোনো পরীক্ষায় বসবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন।

শুধু এ ব্যাংকেই নয় ইসলামী ব্যাংকসহ আরো কিছু ব্যাংকে এ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে রাখা হয়েছে।ব্যাংকসমূহে কর্মরতারা এ পদক্ষেপকে ছাঁটাইয়ের ‘দুরভিসন্ধি’ বলে মনে করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, খরচ কমানোর আরোপিত পরামর্শে পরীক্ষার নামে বিশেষ উদ্দেশ্যে স্থায়ী কর্মীদের নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তাই ব্যাংকে ব্যাংকে এখন ক্ষোভের আগুন জ্বলছে।
এনইউ/জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর