২০ বছর ধরে সরকারি নিয়মে বাড়ি ভাড়া, শতভাগ উৎসব ভাতা, সর্বজনীন বদলি ও এমপিওভুক্ত (স্কুল, কেলজ, মাদ্রাসা) শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন করে আসছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। এর মধ্যে সরকার কিছু কিছু দাবি স্বল্প পরিসরে মেনে নিলেও অধিকাংশই এখনো মেনে নেওয়া হয়নি। বিগত সরকারের শেষ দিকেও টানা আন্দোলন করেন শিক্ষকরা। সেসময় আশ্বাস দিয়ে শিক্ষকদের ধোঁকা দেওয়া হয়। ফলে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শিক্ষকরা আবারো আশায় বুক বাঁধেন। তারা নিজেদের মধ্যে সাংগঠনিক দূরত্ব ঘুচিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে যুগপৎ আন্দোলনের ডাক দেন। এই উপলক্ষে ২ মাসের অধিক সময় ধরে জোটের নেতারা বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় মানববন্ধন ও আলোচনা সভা করেন। ১২ তারিখকে কেন্দ্র করে সবরকম প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয় এবং বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে শিক্ষকরা ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। কিন্তু হঠাৎ করে ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের সাথে বৈঠকের পর জোটের কতিপয় নেতা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। এতে শিক্ষকদের মাঝে বিভ্রান্ত ছড়িয়ে পড়ে। তবে জোটের বৃহৎ একটা অংশ অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজীর নেতৃত্বে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
আজ ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষকরা। সেখানে নেতৃবৃন্দ বলেন, দীর্ঘ ২০ বছরেও ২৫ শতাংশ ঈদ বোনাস, ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এছাড়া সর্বজনীন বদলি না থাকা এবং সম্প্রতি এনটিআরসি’র সুপারিশপ্রাপ্তদের জন্য বদলি নীতিমালা করা হলেও তা বাস্তবায়নে ধীরগতি। সবমিলিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর ধরে বিভিন্নভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করেও এমপিও শিক্ষকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন নেই। বরং বিভিন্ন সরকারের অবহেলায় শিক্ষক সমাজ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাসের পর মাস শিক্ষক আন্দোলন সত্ত্বেও শিক্ষকদের কোনো দাবি পূরণ হয়নি। মৌখিক আশ্বাসের মাধ্যমে শিক্ষকদের সাথে বারবার প্রতারণা করা হয়েছে। দাবি আদায়ের পরিবর্তে বিভিন্ন কৌশলে শিক্ষকদের চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শিক্ষক সমাজ এবার মৌখিক কোনো আশ্বাস নিয়ে বাড়ি ফিরবে না। বরং সরকার দাবিগুলো মেনে প্রজ্ঞাপন আকারে জাতির সামনে প্রকাশ করবে। ইনডোর মিটিংয়ে মৌখিক আশ্বাস দিয়ে শিক্ষকদের সাথে বারবার প্রতারণা করা হয়েছে। ফলে এসব আশ্বাসে শিক্ষকরা আজ বিশ্বাস রাখতে পারছে না।
এদিকে আন্দোলনে আসা শিক্ষকরা বলেন, প্রতিবার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া অবসরপ্রাপ্ত কিছু শিক্ষক নেতা অবসর-কল্যাণ বোর্ডের দায়িত্বের লোভে শিক্ষকদের সাথে প্রতারণা করেছেন। এবার আর সেই সুযোগ নেই। এবারের আন্দোলনে নেতার চেয়ে দাবিটাই মুখ্য। দাবিগুলো মেনে প্রজ্ঞাপন না দেয়া পর্যন্ত একজনও কর্মসূচি থেকে সরব না।
এনইউ /জই