শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব ভাতাসহ নানা দাবি

এমপিওভুক্ত সাড়ে ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী মাঠে নামছেন কাল

আ. তা. মু. নিজাম উদ্দিন

সরকারি নিয়মে বাড়ি ভাড়া, শতভাগ উৎসব ভাতা, সর্বজনীন বদলি ও এমপিওভুক্ত (স্কুল, কেলজ, মাদ্রাসা) শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনে মাঠে নামছেন সাড়ে ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী। আগামীকাল ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তারা অবস্থান করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

শিক্ষকদের বিভিন্ন জোটের সমন্বয়ে গঠিত এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট এই আন্দোলনের ডাক দেয়। এর আগেও শিক্ষকরা বিভিন্ন সময় তাদের দাবি আদায়ে মাঠে নেমেছিলেন। তবে রাজনৈতিক সরকারগুলো তাদেরকে বিভিন্ন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আন্দোলন থামিয়ে দিলেও এবার তারা সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রজ্ঞাপন নিয়েই রাজপথ ছাড়বেন বলে ঘোষণা দিয়েছন।
আন্দোলনের ডাক দেয়া শিক্ষক নেতারা বলেন, দীর্ঘ ২০ বছরেও ২৫ শতাংশ ঈদ বোনাস, ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এছাড়া সর্বজনীন বদলি না থাকা এবং সম্প্রতি এনটিআরসি’র সুপারিশপ্রাপ্তদের জন্য বদলি নীতিমালা করা হলেও তা বাস্তবায়নে ধীরগতি। সবমিলিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর ধরে বিভিন্নভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করেও এমপিও শিক্ষকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন নেই। বরং বিভিন্ন সরকারের অবহেলায় শিক্ষক সমাজ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাসের পর মাস শিক্ষক আন্দোলন সত্ত্বেও শিক্ষকদের কোনো দাবি পূরণ হয়নি। পরিবর্তে শিক্ষকদের বিভিন্ন কৌশলে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
সর্বশেষ গতবছরের ২২ আগস্ট এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য দূর করারসহ দ্রুত শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন করে।
এর আগে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বেসরকারি শিক্ষকরা শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে টানা ২২ দিন আন্দোলন করেন। ওইসময় তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবির বিন আনোয়ার শিক্ষকদের সাথে বৈঠক করেন। সেখানে তারা জাতীয়করণ না হলেও বেতন-ভাতা বাড়ানোর আশ্বাস এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বিবেচনার জন্য দুটি কমিটি করার ঘোষণা দেন। অথচ এগুলোর কোনটাই বাস্তবায়ন করা হয়নি। উল্টো শিক্ষকদের ছুটি কাটছাঁট করা হয়েছিল। এতে শিক্ষক সমাজের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হয়েছিল।
একই বছর (২০২৩ সালের) ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার ৪৪ দিন অবস্থান ও প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোট। ওই সময় প্রেসক্লাবের সামনে ধুলা, বৃষ্টি ও কাদার মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দীর্ঘদিন লাগাতার অবস্থান করে সহস্রাধিক শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ হলেও সরকারের টনক নড়েনি।
এর আগে ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষক-কর্মচারীদের সংগঠন ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোট’। জোটের সদস্য সচিব মো. জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, ১৯৭৩ সালে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ ও ২০১৩ সালে ২৬ হাজার একশোর বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হলেও সরকার এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণ করেনি। বিভিন্ন সময় গুটি কয়েক করলেও তা অপ্রতুল। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় স্কুল কলেজ জাতীয়করণ করলেও মাদ্রাসা একটাও করা হয়নি।
তবে অন্তর্বর্তীকালীন নতুন সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর শিক্ষকরা আবার আশায় বুক বাঁধেন। শিক্ষকদের দাবি, সরকার প্রতিষ্ঠানের আয় কোষাগারে নিয়ে সেটা দিয়ে (চাকরি) জাতীয়করণ করলে এতবেশি ব্যয় করতে হবে না। এতে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি- বাসা ভাড়া বৃদ্ধি, শতভাগ ঈদ বোনাস, সর্বজনীন বদলি চালু হবে এবং কমিটি প্রথার বিলোপ ঘটবে। ফলে শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি মেধাবীরা শিক্ষকতার প্রতি আগ্রহী হবেন। এতে বৈষম্যহীন মেধাভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথ সুগম হবে। একই সাথে শিক্ষকদের আর্থিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং শিক্ষার্থীরাও কম খরচে পড়ালেখার সুযোগ পাবে।
এনইউ/জই

 

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর