এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের পর এবার মাদ্রাসার শিক্ষকরাও বদলি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। পুরো কর্মজীবনে শিক্ষকরা দুইবার এবং শিক্ষিকারা তিন বার কর্মস্থল বদলানোর সুযোগ রেখে এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষকদের বদলির নীতিমালা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকালে নীতিমালাটি প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ।
তবে মাদ্রাসা বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এখানকার আরবি প্রভাষক বা সহকারী মৌলভীদের প্রতিষ্ঠান প্রধান হওয়ার সুযোগ থাকলেও অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষকদের সেই সুযোগ নেই। ফলে দীর্ঘদিন ধরে তারা সমপদে স্কুল-কলেজে বদলির সুযোগ নীতিমালায় অন্তর্ভুক্তির দাবি জানালেও সেটি না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একইসাথে কমিটি কর্তৃক নিয়োগকৃতদের বদলির সুযোগ না দেয়ায় তারাও সন্তুষ্ট নন।
এদিকে জারি করা নীতিমালায় বলা হয়, এটি ‘স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষা (মাদ্রাসা) প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষক বদলি নীতিমালা-২০২৪’ হিসেবে অভিহিত হবে। এতে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলামের সই রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বদলির সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। গত বৃহস্পতিবার স্কুল-কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির নীতিমালা জারি করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।
স্কুল কলেজের শিক্ষকদের বদলির নীতিমালার মতই মাদ্রাসা শিক্ষকদের বদলির নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রতিবছর ১ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে শিক্ষকরা বদলির আবেদন করতে পারবেন। এর আগে প্রতিবছর ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শূন্যপদের চাহিদা প্রকাশ করবে।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রতি বছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বদলির আদেশ জারি করবে। বদলি হওয়া শিক্ষকরা ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেবেন।
শিক্ষকরা নিজ জেলায় বদলির সুযোগ পাবেন। নিজ জেলায় পদ শূন্য না থাকলে তারা নিজ বিভাগের যেকোনো জেলায় শূন্য পদের বিপরীতে বদলির আবেদন করতে পারবেন। চাকরিতে প্রথম যোগদানের দুই বছর পূর্ণ হলে বদলির যোগ্য হবেন শিক্ষকরা।
বদলি হয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার দুই বছর পর বদলির আবেদন করতে পারবেন। একটি শূন্যপদের জন্য একাধিক আবেদন পাওয়া গেলে অগ্রাধিকার বিবেচনায় জ্যেষ্ঠতা, নারী ও দূরত্ব বিবেচনা অগ্রাধিকার পাবে। জ্যেষ্ঠতার বিচার হবে চাকরিতে যোগদানের তারিখের ভিত্তিতে। একটি মাদ্রাসা থেকে বছরে একজনই বদলির সুযোগ পাবেন।
নতুন নীতিমালা নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তবে তারা বলছেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের মতই মাদ্রাসা শিক্ষকদের বদলির ক্ষেত্রেও অক্টোবর থেকে বদলির আবেদন শুরু হবে। অক্টোবরের আগেই সব শিক্ষকদের বদলির সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। কারণ এর মধ্যে এনটিআরসিএ নতুন করে নিয়োগ দিয়ে দিলে বহু শিক্ষক এবার বদলির সুযোগ হারাবেন।
তারা বলেন, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা উভয় ক্ষেত্রেই একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে একজনের বদলির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাবা উচিত। পাশাপাশি তারা মাদ্রাসা থেকে স্কুল-কলেজ বা স্কুল-কলেজ থেকে মাদ্রাসায় বদলির সুযোগ সৃষ্টির দাবি জানান।
কারিগরিতে বদলি আরো পরে : এদিকে এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের বদলির সুযোগ দিয়ে নীতিমালা জারি হলেও এমপিওভুক্ত কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বদলি আরো পরে বলে জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আয়াতুল ইসলাম। তিনি বলেন, কারিগরির নীতিমালা করতে ‘কিছুটা সময় লাগবে’। এখানে বিভিন্ন ‘ভিন্ন ভিন্ন ট্রেড ও স্পেশালাইজেশন চালু। তাই কারিগরি শিক্ষকদের বদলির প্রক্রিয়া একটু ‘জটিল’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এনইউ/জই