মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিল করেছেন। স্থানীয় সময় সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই তিনি এ সম্পর্কিত এক নির্বাহী আদেশে সই করেন। একই সাথে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে একটি নির্বাহী আদেশেও সই করেছেন নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। পাশাপাশি তিনি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটাল হিলের দাঙ্গায় অভিযুক্ত তাঁর ১৫শ’ সমর্থককে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন ট্রাম্প।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধভাবে বা শিক্ষা-পর্যটনসহ সাময়িক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসে সন্তান জন্ম দিলে শিশু মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। তবে বাবা-মায়ের কেউ আমেরিকান নাগরিক হলে সন্তান জন্মের পরই মার্কিন নাগরিক বলে স্বীকৃতি পাবে।
আদেশে সই করার সময় ট্রাম্প স্বীকার করেন যে, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার যেহেতু দেশের সংবিধানে নিশ্চিত করা আছে, তাঁর এই আদেশ আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। তিনি জানান, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব একেবারে হাস্যকর এবং তাঁর বিশ্বাস এই বিধান বদলানোর জন্য ভালো আইনগত যুক্তি আছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে যেতে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়া যাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর বিবিসি’র।
নির্বাহী আদেশে সইয়ের পর ট্রাম্প বলেন, ‘ওহহ, এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।’ দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়া ট্রাম্প আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় এতদিন অন্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র ‘অন্যায্য পরিমাণে’ অর্থ প্রদান করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তীব্র সমালোচনা করে আসছেন ট্রাম্প। এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে এনেছিল। ওই সময় বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়েছিল।
ক্যাপিটাল হিলে দাঙ্গায় ১৫শ’ জনকে ক্ষমা: ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১৫০০ জনকে ক্ষমা করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটাল হিলে দাঙ্গার ঘটনায় জড়িত এসব ব্যক্তিদের ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।
ক্ষমা ঘোষণার পর ট্রাম্প বলেন, তারা আজ রাতে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়া ঘুরে বেড়াবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এছাড়া এ ঘটনায় অভিযুক্ত ৬ আসামির সাজাও কমানোর কথাও জানান ট্রাম্প।
নির্বাচনের আগে সমর্থকদের কাছে টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এবার তিনি তার সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করলেন।
২০২০ সালের নির্বাচনে জয়ী হন ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ফলাফল পাল্টে দিতে চেষ্টা করেন ট্রাম্প। ফলে তার উগ্র সমর্থকরা ক্যাপিটাল হিলে দাঙ্গা শুরু করে। এ ঘটনায় অনেককে পরবর্তীতে কারাগারে পাঠানো হয়।
কারাদফতরের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা এখন ট্রাম্পের পদক্ষেপের অপেক্ষায় আছেন। কারণ তার আদেশ পেলে সোমবারই অনেককে ছেড়ে দেয়া হতে পারে।
২০২১ সালে ট্রাম্পের এক জালাময়ী বক্তব্যের পরই তার দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ক্যাপিটাল হিলে পুলিশের ব্যারিকেট ভেঙে প্রবেশ করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সেই সময়ে নির্বাচনের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার জন্য বৈঠকে বসা আইনপ্রণেতা ও ট্রাম্পের তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে আত্মরক্ষার জন্য পালাতে বাধ্য করে।
সোমবার শপথ গ্রহণের পর দেয়া বক্তৃতায় যুক্তি দেখিয়েছেন যে ক্যাপিটাল হিলের ঘটনায় আইনের মারপ্যাচে ১৫০০ জন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ সময় তিনি তাদের বন্দি বলেও উল্লেখ করেন।
এনইউ/জই