বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

ব্যাংকে ফিরছে টাকা

বিশেষ প্রতিনিধি

২০২২ সালের নভেম্বর মাসে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ‘ইসলামী ব্যাংকে ভয়ঙ্কর নভেম্বর’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশের পর মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ফলে মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঘরে রাখতে থাকেন। এতে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দেয়। যার হিড়িক পরবর্তী ৬/৭ মাস পর্যন্ত থাকে। তবে একেবারে পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। এরপর এবছরের ৫ আগস্ট সরকার পতন হলে আবার ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক শুরু হয়। তবে সরকারের নানা আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তা দ্রুত কাটতে থাকে।

তথ্য মতে, গত দুই মাসে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে) ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যাংকে ফিরেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, নির্বাচন কেন্দ্রিক অনিশ্চয়তা, দুই ঈদের বাড়তি খরচ, ব্যাংক মার্জের খবর এবং জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের প্রভাবে অনেকে টাকা তুলে নিয়েছিলেন। তাই ব্যাংকের বাইরে টাকা বেশি ছিল।

তবে বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগে স্থিতিশীলতা ফেরায় ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে। তাই ঘরে থাকা টাকা ব্যাংকে ফিরছে। মানুষের কাছে নগদ টাকা হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা সরবরাহের তথ্য থেকে বুঝা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে টাকা ছাপানো হয়, তার একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের চেস্ট শাখায় গচ্ছিত থাকে। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে ব্যাংকগুলোর ভল্টেও কিছু টাকা থাকে। এ ছাড়া ছাপানো টাকার বড় অংশ থাকে মানুষের হাতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালাগাদ প্রতিবেদন বলেছে, গত অক্টোবর শেষে ছাপনো টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের চেস্ট শাখায় ছিল ৫১ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। বাকি অর্থের ২১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা ব্যাংকগুলোর ভল্টে এবং ২ লাখ ৭৯ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা ছিল মানুষের হাতে। আর ব্যাংকগুলোর ভল্ট ও মানুষের হাতের টাকা যোগ করলে পাওয়া যায় প্রচলনে থাকা টাকার হিসাব। গত অক্টোবর শেষে প্রচলনে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ১ হাজার ৮১ কোটি টাকা।

অন্যদিকে গত আগস্ট শেষে ছাপানো টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের চেস্ট শাখায় ছিল ৩৫ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। বাকি অর্থের ২৩ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা ব্যাংকগুলোর ভল্টে এবং ২ লাখ ৯৩ হাজার ৬২২ কোটি টাকার মানুষের হাতে ছিল। আর আগস্ট শেষে প্রচলনে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই মাসে মানুষের হাতে থাকা ১৪ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা ব্যাংকে ফিরছে। যদিও গত ১৫ আগস্ট মানুষের হাতে রাখা টাকার পরিমাণ বেড়ে উঠেছিল ৩ লাখ ১ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, আওয়ামী সরকার পতনের পর ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা বেড়ে গিয়েছিল। তা প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে ধীরে ধীরে তা কমে এখন ২ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকায় নেমেছে। এতে বোঝা যায় মানুষ ব্যাংকে টাকা ফেরত দিচ্ছে।

এদিকে ঘরের টাকা ফিরতে শুরু করায় সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতে বার্ষিক আমানতের প্রবৃদ্ধিতে সামান্য উন্নতি হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে আমানতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয় ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। এ সময় আমানত বেড়ে হয় ১৭ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। আগের মাস আগস্টে আমানতের পরিমাণ নেমে গিয়েছিল ১৭ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকায়। আর আগস্টে আমানত বার্ষিক প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় ৭.০২ শতাংশে, যা ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রেকর্ড ৬.৮৬ শতাংশ নিম্নে পৌঁছে ছিল এই প্রবৃদ্ধি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও দেখা গেছে, ব্যাংক খাতে সাধারণত প্রতি মাসে আগের মাসের তুলনায় আমানত বাড়ে। তবে, জুলাই ও আগস্ট মাসে আমানত বাড়ার বদলে উল্টো কমে গেছে। চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতে আমানত ছিল ১৭ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, দুই মাসের ব্যবধানে আমানত কমেছিল প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য ব্যাংক খাত সংস্কারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানান পদক্ষেপের কারণে সেপ্টেম্বরে গ্রাহকদের ব্যাংক থেকে ডিপোজিট তুলে নেওয়ার প্রবণতা কমেছে।

তবে ভিন্নমতও এসেছে অর্থনীতিবিদদের তরফে। তারা বলছেন, ৫ আগস্টের আগে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো বর্তমানে তারল্য সংকটে পড়ায় গ্রাহককে চাহিদা মত টাকা দিতে পারছে না। ফলে গ্রাহকের হাতে টাকা যাচ্ছে না।

এনইউ/জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর