শেয়ারবাজারে সাড়ে তিন বছরে মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে । রোববার অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দরপতন হারানোয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৪৯ দশমিক ২০ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৯৬৫ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে নেমেছে। সূচক পতনের হার ২ দশমিক ৯১ শতাংশ।
পতনের হার বিবেচনায় তা ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল বা গত সাড়ে তিন বছরের সর্বোচ্চ। ওই দিন ঢাকার শেয়ারবাজারের ডিএসইএক্স সূচকটি ১৮১ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ হারিয়ে ৫০৮৯ পয়েন্টে নেমেছিল।
তবে পয়েন্ট বিবেচনায় সূচকের এ পতন ২০২২ সালের ৭ মার্চের পর সর্বোচ্চ। ওই দিনের দরপতনে ঢাকার শেয়ারবাজারের এ সূচকটির ১৮২ পয়েন্ট হারিয়ে ৬৪৫৬ পয়েন্ট নেমেছিল। তবে ওই দিনের সূচক পতনের হার ছিল ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
আজ ঢাকার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৯৭ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৯৪টির কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩৯টিই দর হারিয়েছে। কমপক্ষে ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে ১৫৯ শেয়ার।
দেশের দ্বিতীয় শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) ব্যাপক দরপতন হয়েছে।
গণঅভ্যূত্থানের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে শেয়ারবাজারে সুশাসন ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজ শুরু করে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতে নতুন নেতৃত্ব বসিয়েছে।
নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের কৃত্রিম ব্যবস্থা তুলে নিয়ে বাজারকে স্বাভাবিক গতি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। একই সঙ্গে আগের কারসাজির ঘটনায় কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে। কারসাজি অনিয়মের বিরুদ্ধে আরও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত করছে। একই সঙ্গে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। তবে এর মধ্যে গত ১৫ বছরে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর রুগ্ন দশা প্রকাশ হয়ে পড়ায় সেগুলোর দরপতন হচ্ছে।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা এ বাস্তবতাকে অস্বীকার করছেন না। তারা বলছেন, এর বাইরে বিগত সরকার বাজেটে হটাৎ করে বড় বিনিয়োগকারীদের মূলধনী মুনাফায় ২৫ শতাংশ কর আরোপ করেছে। আদতে বিনিয়োগকারী সম্পদশালী হলে তাদের করভার সাড়ে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত হয়।
এতো বিশাল কর বোঝা নিয়ে অনেক বড় বিনিয়োগকারী ঝুঁকিপূর্ণ বাজারে বিনিয়োগে রাজি নন, ফলে তারা বাজার ছেড়েছে।
আবার বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দফায় দফায় নীতি সুদহার বাড়িয়ে চলেছে। বাংলাদেশে এ পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতি কখনো নিয়ন্ত্রণে না আসলেও ক্ষতি হচ্ছে শেয়ারবাজারে।
বিনিয়োগকারীরা যেখানে ঝুঁকিহীনভাবে ব্যাংকে আমানত রেখে ১০-১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাচ্ছেন। তখন শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করছেন বা নতুন করে বিনিয়োগ আসছে না। এ অবস্থায় যে দরপতন হচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণে না সরকার, না নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা অন্য কোনো সংস্থা কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে দরপতন ক্রমে বাড়ছে।
গত আড়াই মাসের দরপতনে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পরিমাণ হাজার হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতি দায়িত্বশীলরা কোনো দায়তো নিচ্ছেই না, কোনো কথাও বলছেন না। এ অবস্থায় দুপুরে কয়েকশ বিনিয়োগকারী রাজধানীর মতিঝিলে ডিএসইর পুরাতন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। তারা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ অযোগ্য দাবি করে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন।
তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারে লেনদেনে সুশাসন ফেরাতে এ সংস্থা আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিছু বিনিয়োগকারীরা যেভাবে দাবি করছেন, এ কমিশনের কারণে দরপতন হচ্ছে, আদতে তা সত্য নয়। বর্তমান কমিশন কারসাজিমুক্ত একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শেয়ারবাজার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে।
বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করায় দরপতন তাড়াতাড়ি হচ্ছে। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি যখন ভালোর দিকে, তখন বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানাচ্ছেন বিএসইসির কর্মকর্তারা।
এনইউ/জই