মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

কল্পনা যখন কল্পনার চেয়েও বেশি

অনলাইন ডেস্ক

কল্পনা পেশায় ছিলেন পরিচালক। ভূপেনের গান মুগ্ধ করেছিল তাঁকে। সেখান থেকেই প্রেমে পড়া। গায়কের বয়স তখন ৮৩। চূড়ান্ত অসুস্থ হয়ে এলেন মুম্বইয়ে।

যদি পাওয়া যায় সেই সম্পর্কের নামকরণ কী হয়? ভূপেন হাজারিকা আর কল্পনা লাজমির সম্পর্ক হয়তো অনেকটা সেরকম। কল্পনা জীবিত থাকলে ২৫-এ তাঁর বয়স হত ৭১। ভূপেন হাজারিকার সঙ্গে তাঁর ছিল প্রায় ৩০ বছরের ফারাক। অথচ প্রথম দিন থেকেই মানুষটির প্রতি অনুরক্ত ছিলেন কল্পনা!

কল্পনা পেশায় ছিলেন পরিচালক। ভূপেনের গান মুগ্ধ করেছিল তাঁকে। সেখান থেকেই প্রেমে পড়া। গায়কের বয়স তখন ৮৩। চূড়ান্ত অসুস্থ হয়ে এলেন মুম্বইয়ে। স্ত্রী প্রিয়ম্বদা পটেলের সঙ্গে ভূপেনের সম্পর্কের অবনতি ততদিনে ঘটেছে। নিজের সব সঞ্চয় বাজি রেখে গায়ককে মুম্বইয়ের হাসপাতালে ভর্তি করান কল্পনা।

তিলতিল করে জমানো সব কিছু খরচ করতে একটুও ভাবেননি তিনি। অথচ ভাগ্যের কী পরিহাস! ভূপেনকে ফেরাতে পারেননি কল্পনা। কিছু বছর পর তিনি যখন অসুস্থ হন, হাতে নেই কানাকড়িও। প্রথম দিকে কিছু বন্ধু এগিয়ে আসে। পরে হাত ছাড়ে তাঁরাও। হাসপাতালে কষ্টে-যন্ত্রণায় মাত্র ৬৪ বছরেই মারা যান কল্পনা।

মাত্র ১৭ বছর বয়সে গায়কের সঙ্গে দেখা হয় কল্পনার। সে সময় গায়কের বয়স ৪৬ বছর। প্রথম দেখাতেই ভালবাসা। ফোনে চলত কথা। ঠিক দুই বছর ডকু ছবি বানানোর অজুহাতে কলকাতায় চলে আসেন কল্পনা। একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন গায়কের সঙ্গে। গায়কের মা যদিও এই সম্পর্কের কথা মেনে নেননি। বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন একাধিকবার। মেয়ে শোনেননি।

কল্পনার মা ললিতাদেবী একবার সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমরা খুব অবাক হয়েছিলাম। ওর বাবা ওকে মিস করত। কল্পনা কলকাতায়। আমরা ওকে আনতে যাই। ও তখন মাত্র ১৯। ও আসেনি। ভূপেনদা ওর বাবার বয়সী ছিলেন।”

কী ছিল তাঁদের মধ্যে? শারীরিক কামনা? উত্তর, না! যা ছিল তা হয়তো নিজেও জানতেন না কল্পনা! প্রেম, ভালবাসার ঊর্ধ্বে উঠে এ সম্পর্ক দাঁড়িয়ে ছিল আস্থা ও বিশ্বাসের উপর। একবার এক সাক্ষাৎকারে কল্পনা বলেছিলেন, “জানি না আমাদের মধ্যে কী আছে, তবে ভূপেন আমার জীবনটা কেমন যেন বদলে দিয়েছে। আমি জানি কোনও সম্পর্কেই এভাবে নিজেকে উজাড় করে দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু ও আমার জন্ম-জন্মান্তের সঙ্গী।”

কল্পনা জানতেন, ভূপেনের হাতে বেশি সময় নেই। বিয়ে-সন্তান-সম্পত্তির প্রত্যাশী ছিলেন না তিনি। আক্ষেপ ছিল একটাই, ‘ইশ যদি আরও কিছু বছর মানুষটাকে পেতাম’।

নিজের কথা না ভেবে যখন কার্যত বাড়ি-ঘর বেচে ভূপেনের চিকিৎসা করাচ্ছেন কল্পনা তাঁকে সাবধান করেন শুভান্যুধায়ীরা। তিনি বলেছিলেন, “কী হয়েছে পয়সা নেই তো? মরে যাব… আবার ওর সঙ্গে দেখা হবে আমার।”

লতা মঙ্গেশকর ও ভূপেন হাজারিকার বন্ধুত্ব নিয়ে একসময় প্রবল চর্চা হয়েছে। এমনকি প্রিয়ম্বদাও এ নিয়ে মন্তব্য করতে ছাড়েননি। লতাকে নিয়ে তাঁর ও প্রিয়ম্বদার মধ্যে টানাপড়েনের ছবি ফুটে উঠেছিল ভূপেন হাজারিকার আত্মজীবনী ‘আমি এক যাযাবর’-এ। ২০১২ সালে ভূপেনবাবুর মৃত্যুর বর্ষপূর্তিতে প্রিয়ম্বদা সরাসরি দাবি করেন, লতাজি কলকাতায় এলে ভূপেনবাবুকে আর কাছে পাওয়া যেত না। না, হিংসে-রাগ নয়। বরং সেই সময়ও কল্পনা দাঁড়িয়েছিলেন ভূপেনের পাশেই।

যাযাবরের সঙ্গে দিনযাপনের ইচ্ছে ছিল কল্পনার। প্রতি মুহূর্তে তাঁকে পাশে চেয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে ভূপেন হাজারিকা কোনওদিনই বিয়ে করতে চাননি কল্পনাকে। লিভ-ইন সঙ্গী তকমাতেই সন্তুষ্ট ছিলেন কল্পনা। ২০১১ সালে মারা যান ‘ব্রহ্মপুত্রের পাখি’। পাখির অমোঘ আকর্ষণে তাঁর মৃত্যুর মাত্র ৭ বছরের মাথায় প্রয়াত হন কল্পনাও! কিডনি ক্যানসারে কার্যত বিনা চিকিৎসায় চলে যান তিনি।

ছবি ও লেখা দ্যা ওয়াল নিউজ থেকে সংগৃহীত

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর