কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্য থিং অং এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছেন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের কাছে এ স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, কলেজের এডহক কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য এডভোকেট রফিকুল ইসলাম, ব্যবসায় বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুরুল আজিম, গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম এবং মলিকুলার বায়োলজি ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক শারায়াত পারভীন প্রমুখ।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটি অধ্যক্ষ ক্য থিং অং এর সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অর্থ আত্মসাতের কারণে ধ্বংসের মুখোমুখি। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হওয়ার সুবাধে ক্য থিং অং ২০০০ সালে কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। স্ত্রী সভাপতি ও স্বামী অধ্যক্ষ (পদাধিকার বলে সদস্য সচিব) হওয়ার দরুন চেকের সিপ্লেটরি পাওয়ারের যথেচ্ছা ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে অর্থ আত্মসাতসহ সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
তিনি ২০১৭ সাল থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য কর্তনকৃত ৭ কোটি ৪৩ লক্ষ ১০ হাজার ৮শ ১৩ টাকা জমা না করে আত্মসাৎ করেন। একই সাথে কলেজে পর্যাপ্ত ফান্ড থাকা সত্ত্বেও ৯ কোটি ৫৮ লক্ষ ৫৩ হাজার ৩শ ৭৯ টাকা বকেয়া রেখে নিজের সব পাওনা (বেতন ভাতা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি) অগ্রিম আদায় করে নিয়েছেন।
কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও অধ্যক্ষ আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ঠ লোক হওয়া সত্ত্বেও সরকারি অর্থায়নে ভবন নির্মাণের চেষ্টা না করে নিজস্ব অর্থায়নে ৬ তলা বিশিষ্ট টেন্ডারবিহীন দুটি ভবন নির্মাণ করেন, যেখানে ১০ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়। জিবি কর্তৃক নিয়োগকৃত অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী বিধিমালা বহির্ভূতভাবে নির্মাণ কমিটির স্বাক্ষর ও অর্থ কমিটির অনুমোদন ছাড়াই অধ্যক্ষের স্বাক্ষরে বিল ভাউচার করে অধিকাংশ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গভর্নিং বডির অগোচরে একাউন্টস এর সাথে যোগসাজসের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় কলেজ ফান্ড থেকে বিধি বহির্ভূতভাবে ৭৮ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণের নামে টাকা উত্তোলন করে কলেজ ফান্ডে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। যেখানে প্রতি বছর ২৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়, সেখানে নিয়মিত হিসাবরক্ষক নিয়োগ না দিয়ে অধ্যক্ষের অনুগত কর্মচারীদেরকে হিসাব শাখায় বিধিবহির্ভূত আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করে আসছেন।
আগামী ১৫ জানুয়ারি অধ্যক্ষ ক্য থিং অং অবসরে যাওয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের তিনদিন আগে অর্থাৎ (১২ জানুয়ারি) অধ্যক্ষ ক্য থিং অং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠতাবিধি লঙ্ঘন করে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ ধামাচাপা দিতে তার অনুগত অপেক্ষাকৃত জুনিয়র শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। এ কারণে কলেজে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীর মাঝে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। এর ফলে কলেজে দীর্ঘ মেয়াদে অচলাবস্থা তৈরির সম্ভাবনাও রয়েছে।
এ বিষয়ে কলেজের এডহক কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য এডভোকেট রফিকুল ইসলাম জানান, দুর্নীতির অভিযোগে অধ্যক্ষ ক্য থিং অং কে অডিট রিপোর্টের আলোকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন কলেজের বর্তমান সভাপতি অধ্যক্ষ জসীম উদ্দিন। এডহক কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। আজ রোববার অধ্যক্ষ ক্য থিং অং এর ২০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
কলেজের বিভিন্ন বিভাগের সিনিয়র শিক্ষকরা বলেন,
জ্যেষ্ঠতাবিধি লঙ্ঘন করে জুনিয়র একজন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে বসিয়েছেন ক্য থিং অং। তিনি নিজের অপকর্ম ঢাকতে সিনিয়র শিক্ষকদের বঞ্চিত করে জুনিয়র শিক্ষককে পদে বসিয়েছেন। এটা চরম অন্যায় ও অবিচার হয়েছে।
এনইউ/জই
