রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

বন্দর নিয়ে হঠাৎ ব্যথায় কাতর, এরা কারা?

তানভীর আহমেদ

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে হঠাৎ একটি চক্রের পুরনো কায়দায় মাতামাতি শুরু হয়েছে। খুব ব্যথা পাচ্ছেন। ওই চক্রে কেবল লোকবদল হয়।

কায়েমি স্বার্থ, চক্রান্ত এবং ভাষা এক। এক যুগেরও বেশি সময় বন্দরকে পৈত্রিক সম্পত্তি ভাবা একটি কোম্পানি কর্তৃক প্রাপ্ত অর্থ পকেটেস্থহ করে বন্দর নিয়ে হঠাৎ মায়া কান্নার পাশাপাশি রাজপথে মিছিল ও অনশন শুরু করেছে চক্রটি।বন্দর নিয়ে কখন কারা কি করেছে তা চট্টগ্রামবাসীর তো অজানা নয় তো। এখন আবার পুরনো ‘রা,।

বন্দর কেন্দ্রীক সরকারী পরিকল্পনার কথা আমরা সাম্প্রতিক সময়ে শুনেছি।বন্দর যেহেতু দেশের লাইফ লাইন সেই গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারে পরিকল্পনা থাকতেই পারে।

পরিকল্পনার ভালো মন্দ দিক নিয়ে কথা হতে পারে। কিন্ত অচল করে দেয়ার হুমকির নেপথ্যে মতলব কি,এরা কারা?সরকার বন্দর নিয়ে কি করতে চাইছে সেটা যেহেতু স্পষ্ট করা হয়েছে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের মধ্য কথা হতে পারে,সরকারকে এ সম্পর্কে বার্তা দেয়া যেতে পারে। কিন্তু সিন্ডিকেটবাজি করে লাভ কি?ব্যক্তিস্বার্থ বড় পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করবে কেন? নেপথ্যে যে এখানে সিন্ডিকেটবাজি কাজ করছে তা স্পষ্ট হয়ে সম্প্রতি বন্দর অচল করে দেয়ার কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁসের মাধ্যমে।

বিরোধীতাকারীদের মতে বিদেশী প্রতিষ্টান ডিপি ওয়ার্ল্ড কে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব দিলে বন্দর নাকি রসাতলে যাবে।

বাস্তবতা হচ্ছে, এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা আর মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সাফল্যের সাথে বন্দর পরিচালনা করা DP World এনসিটির দায়িত্ব নিলে চট্টগ্রাম বন্দরের চেহারা আমূল বদলে যাবে।

আমরা জানি চট্টগ্রামের প্রচন্ড সম্ভাবনা থাকার পরেও চট্টগ্রাম বন্দর আন্তর্জাতিক মানদন্ডে কতটা পিছিয়ে আছে। একটা লাইটার জাহাজ ডুবে গেলে, একটা জাহাজ দুর্ঘটনা হলে, একটা জাহাজে আগুন লাগলে কিংবা বেশী সংখ্যক জাহাজ এলে চট্টগ্রাম বন্দরের রেসপন্স কতটা শ্লথ। সবচেয়ে বড় ইস্যু কার্গো বা কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে পেশাদারিত্ব নিয়ে আসা আর ক্যাপাসিটি বাড়ানো।

পাঁচ বছর পর ৫ মিলিয়ন টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে হবে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে টার্মিনাল ও বে টার্মিনাল নির্মাণে চুক্তি হয়েছে। ২০২৯ সালে মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দর অপারেশনে চলে যাবে। বন্দর ও কাস্টমসকে একসঙ্গে কাজ করতে হয়। এর সুফল দেখতে পাচ্ছেন। নিলামে গতি এসেছে।

ই টিকিটিং চালু করায় সব সিস্টেমে চলে আসছে। মেরিটাইম সিঙ্গেল উইন্ডো চালু হয়েছে। এতে বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। পেমেন্ট ডিজিটাল হয়ে যাবে। ডিজিটালাইজেশন ও ডি কার্বোনাইজেশনের বিকল্প নেই। জুনের মধ্যে বন্দরের পুরো কার্যক্রম অটোমেশন করে ফেলার প্ল্যান। গ্রিন মেরিটাইম করিডোর হবে চট্টগ্রাম বন্দর। মাতারবাড়ী, বে টার্মিনাল, লালদিয়া হবে গ্রিন পোর্ট। এ টার্মিনালগুলো চালু হলে নতুন শিপিং রুট খুলে যাবে।

যারা বাধা দিচ্ছে, তাদের এই বন্দর সংশ্লিষ্ট হয়তো কোন ব্যবসা আছে নইলে কোন ভাগ-বাটোয়ারার পরিকল্পনা আছে। বিশেষ করে নিউ মুরিং টার্মিনালে এক যুগেরও বেশি সময় যাবত বন্দরে ছড়ি ঘুরানো একটি কোম্পানি লুটপাট বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনায় ক্রন্দন শুরু করেছে । ঐ কোম্পানির মালিককে বর্তমানে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের দুই নেতা সব ধরনের সহযোগিতা করছেন অকাতরে।এ খবর চট্টগ্রামবাসী জানে।

সাধারণ জনগণ দেশের কল্যাণ চায় এবং জনগণ চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির উপর ভরসা রাখতে চায়, যেভাবে রেখেছে ঢাকা বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল পরিচালনায় জাপানের উপর ও আনোয়ারা-কর্ণফুলী এলাকার কোরিয়ান ইপিজেড পরিচালনায় দক্ষিণ কোরিয়ার উপর । মাঠে নামা কথিত নেতা ও সুশীলদের বলছি দেশকে সবার আগে প্রাধান্য দিন। ভাগাভাগির চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে দেশকে ভালবাসুন। ৫৪ বছর তো ভাগাভাগি আর পকেট অনেক ভারী হল, আর কত……….???

গ্লোবালাইজেশন ও প্রযুক্তির এই যুগে জনগণ এখন সবই জানে এবং বুঝে। জনগণকে বোকা বানানোর মিশন নিয়ে নেমে কেন লাভ হবে না।

যতই মাঠে নামানো হোক না কেন.. তদেশপ্রেমিক জনতার বানের স্রোতে এরা ভেসে যাবে।

লেখক, সাংবাদিক

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর