মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপেষু

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকার। বঙ্গবন্ধুর পর বাঙালির যা কিছু অর্জন, অহংকার- বৈশ্বিক কুটনীতিতে যা কিছু অর্জন, তা তাঁর নিপুন মস্তিষ্কপ্রসূত। কঠোর পরিশ্রমের ফল।
এজন্য জনগণ তাঁকে আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার আখ্যা দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর রক্তের উষ্ণ স্রোতের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তিনি বাংলাদেশের মানুষকে ধীরে ধীরে, তিলে তিলে সমৃদ্ধ করে চলেছেন।
বাংলাদেশের অগ্রগতি বহুমাত্রিক হলেও শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক আছে। সংকট আছে। শিক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তদের মননশীলতায়, অভিজ্ঞতায়, চর্চা ও চেতনায় ঘাটতি আছে। তবুও তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে, তাদের সীমিত মেধা ও যোগ্যতা নিয়ে।
শিক্ষা দেশের সবচেয়ে বড় ক্যাডার। এখানে জনবল বেশি। শিক্ষিত মানুষের সংশ্লেষ- সংমিশ্রণ- সম্মিলন বেশি। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। এ কথা বহু পুরনো এবং পরীক্ষিত। শিক্ষার অগ্রগতির মাধ্যমেই জাতির সমৃদ্ধির বিকাশ ঘটে।জাতীয়তার সত্তা, ঐতিহ্য ও ঐশ্বর্য সুরক্ষিত হয়।বাংলাদেশে শিক্ষার হার বেড়েছে,
মান বাড়েনি বলে অনেকেই মনে করে। শিক্ষা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার অবসান হয়নি। এটি চলমান একটি প্রক্রিয়া।
প্রাকৃতিক ভাবে এবং জাতিসত্তার অতীত ও বর্তমানের নিরিখে বাঙালি দূরদর্শী এবং মেধা সম্পন্ন। বাঙালির মেধা ও মননের চর্চা যথাযথভাবে ঘটলে আমাদের প্রজন্মকে ঠেকিয়ে কিংবা থামিয়ে রাখা যায় না।
সতের কোটি মানুষের বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম সারা দুনিয়ায় সে বিস্ফোরণের স্বাক্ষর রাখছে সতত।
শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন সংস্থাগুলোর অন্যতম শিক্ষা বোর্ড।
দেশে এখন পর্যন্ত আটটি শিক্ষা বোর্ড আছে। বোর্ডগুলো পরিচালিত হয় নির্দিষ্ট অর্গানোগ্রামের কিছুসংখ্যক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে।চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড দেশের পঞ্চম শিক্ষা বোর্ড।
গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যায়, এই শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠার পর থেকেই (৯০ এর দশকে) এখানে যেসব দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে নিয়োগ পেয়েছে, বিশেষ করে চেয়ারম্যান, সচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, কলেজ ইন্সপেক্টর, স্কুল ইন্সপেক্টর, ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে প্রায় সকলেরই শিক্ষাগত অতীত কোচিং বাণিজ্য, প্রাইভেট- টিউশনির ব্যবসা, প্রভৃতি সামাজিক বিতর্কিত কর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত অবস্থা থেকে।
শিক্ষাকে বাণিজ্যে রূপান্তরিত করার যে প্রক্রিয়াটি এখন সমাজে ব্যাপকভাবে আলোচিত সমালোচিত, তার সাথে এখানকার গুরুত্বপূর্ণ পদে সম্পৃক্ত মানুষগুলো কম বেশি নিবিড়ভাবে যুক্ত থেকেছে অতীতে। বর্তমান ও বিচ্ছিন্ন নয়। এটি পুঁজিহীন একটি চমকপ্রদ ব্যবসা। ধর্ম- বর্ণ- গোষ্ঠী- ডান-বাম, অর্ধ ডান- বাম নির্বিশেষে বৃহৎ সংখ্যার শিক্ষকদের তথাকথিত অস্তিত্ব- সম্পৃক্ত একটি ব্যবসা এটি।
মনে করা হয়, কোচিং বাণিজ্য শিক্ষার্থীদের স্বকীয়তা প্রবৃদ্ধিতে, সৃজনশীলতা সৃষ্টিতে এবং আত্মনির্ভরশীলতাকে বৃদ্ধি করতে সবচেয়ে বড় বাধা।বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিতর্কের মধ্য দিয়ে এই বাণিজ্যটি নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে, বিস্তৃত হয়েছে, বিকশিত হয়েছে এবং সমাজে শিক্ষা বৈষম্য সৃষ্টি করেছে।
বিতর্কিত এই বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত মানুষগুলোই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে,আমলাতান্ত্রিক মামলাকে কাজে লাগিয়ে, জায়গা মতো দলবাজি করে, অদুরদর্শি রাজনীতিকদের দ্বারা আঞ্চলিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন আকর্ষণীয় প্রতিষ্ঠানের বড় বড় পদ থেকে শুরু করে শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন পদগুলোতে পদায়ন নিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ফলাফল নির্ণায়ক, মেধা ও যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন নির্ধারক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্থাটি কোচিং বাণিজ্যের শিক্ষা-বাণিজ্যের কথিত শিক্ষক দ্বারা দিনে দিনে কলুষিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড তার প্রচলিত উদাহরণ। আবারো উল্লেখ করতে চাই, এক আধজন ব্যতিক্রম বাদ দিলে, এখানকার সবাই শিক্ষা বাণিজ্যের অঙ্গ- অংশ- অংশীদার হয়ে এই সংস্থায় পদায়িত হয়েছে।
এর জন্য তারা কৌশল করেছে, কৌশলের পথ ধরেছে। আমলাতন্ত্রকে আকৃষ্ট করেছে। রাজনীতিকদের আস্থায় নিয়েছে।
নৈতিকতা বলতে শিক্ষার যে উজ্জ্বল অংশটুকু নিয়ে সমাজ, দেশ, জাতি অহংকার করে, এখানে সেই জায়গাগুলোকে বিতর্কিত করা হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে। শিক্ষার মানদণ্ডের যে অহংকার কিংবা অলংকার মানুষকে আকৃষ্ট করে,
অহংবোধে আপ্লুত করে, তাকে নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনী ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। সমগ্র জাতি উপকৃত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন জয় এবং জয় করা স্বপ্নকে টেকসই করতে শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি ও তাকে টেকসই করার কোন বিকল্প নেই।
শিক্ষার গুণগতমানের সাথে নৈতিকতা, সততা, নিষ্ঠা, নিবিড় ভাবে সম্পর্কিত।
শিক্ষাকে সামাজিক অলংকার এবং অহংকারে পরিণত করতে, এর সকল প্রকার দূষণকে বর্জন করতে হবে। অপসারণ ও নির্মূল করতে হবে সকল প্রকার অনৈতিকতা, বাণিজ্য এবং অসাধুতা। তাই এর সাথে সম্পর্কিত রাজনীতির নির্লিপ্ততা ,অমনোযোগিতা, নীরবতা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের দিকে তাকালে নৈতিকতার সেই জায়গাটি পদ অর্গানোগ্রামের উপর দিক থেকে বিনষ্ট হয়ে চলেছে।
এর সাথে দায়িত্বশীলরা যদি নির্বাক থাকে, নির্লিপ্ত থাকে, অন্যমনস্ক থাকে কিংবা নিরব থাকে, তাহলে তা আগামী দিনের সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য কোনভাবেই শোভন হবেনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সৈনিক হওয়ার যোগ্যতা এরা হারিয়ে ফেলছে ধরেই নিতে হবে।
এর সাথে সংশ্লিষ্ট-সম্পৃক্ত নেতা-নেত্রী, আমলা মন্ত্রী, যারাই থাকুন না কেন, তারা কখনোই দায় এড়াতে পারবেন না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাছে আমাদের বিনীত আবেদন- সততা, নিষ্ঠা ও নির্ভরতার জায়গাগুলোকে যারা তিল তিল করে ধ্বংস করছে, তাদের প্রতি সচেতন হোন, কঠোর হোন, সক্রিয় হোন এবং তাদের নিবৃত করুন।
এদেশের মানুষ আগামী, প্রজন্ম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দারুন ভাবে, সীমাহীন ভাবে আস্থায় রাখে, নির্ভর করে এবং তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান ও বিশ্বাসের সাথে অন্তরে লালন করে। এ বিশ্বাস টিকে থাক, টেকসই হোক- এটি একান্ত প্রত্যাশা।
মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর- ১১
২৭/১২/২০২৩ খ্রি

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর