ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি কমলা হ্যারিস, কে হচ্ছেন আমেরিকার পরবর্তী রাষ্ট্র প্রধান? গত কয়েকটা দিন গোটা বিশ্বের নজর ছিল সেই দিকেই। এমনকি ঢাকায় হ্যারিসের পক্ষে রোড’শো হয়েছে। অন্যকোনো সময় বাংলাদেশের মানুষ বিষয়টা নিয়ে তেমন খোঁজখবর না নিলেও এবারের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। একদিকে গাজা-ইউক্রেনে হামলা ইস্যু, অন্যদিকে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন- সবমিলিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এবারের নির্বাচন।
নির্বাচনে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির দুই রাষ্ট্রপতি পদ প্রার্থীর লড়াই সমানে সমানে চললেও শেষ হাসি হাসলেন ট্রাম্প। প্রতি মুহূর্তের আপডেট অনুযায়ী এটা স্পষ্ট যে, গণনার মাঝ পর্যায়েই জয়ের পথ প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে সেই সুদূর আমেরিকার এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে এখন ব্যস্ত বাংলাদেশও।
এই মুহূর্তে গণ অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের ক্ষমতাভার রয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপর। পশ্চিমা বিশ্ব যদিও সমর্থন করেছে মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। তবে এই আবহে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি এক্স হ্যান্ডেল বার্তা নতুন করে ভাবাচ্ছে এদেশকে।
এমনিতেই ট্রাম্পের সাথে যথেষ্ট ভালো সম্পর্ক রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। ট্রাম্পের রাজত্বকালে নতুন উচ্চতায় গেছে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে ঠিক এই বিষয়টি নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
কারণ হিসাবে ধারণা করা হয়, কিছুদিন আগে ট্রাম্প এক্স হ্যান্ডেলে মতপ্রকাশ করেছিলেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বরোচিত সহিংসতা হচ্ছে উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানান। পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদিকে তার খুব ভালো বন্ধু বলে উল্লেখ করেন।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রভাব বাংলাদেশে কতটা- এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতি-বিশ্লেষক এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে বাইডেন প্রশাসন যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা কমলা হ্যারিস ক্ষমতায় এলে কিছুটা বাড়তে পারে।একইভাবেই টেকসই গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তুলতে পারলে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকেও সহযোগিতা পাওয়া যাবে। বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর প্রতি ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা লক্ষ করা যায়।’
পাশাপাশি তার আরোও সংযোজন, ‘এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় যে প্রশাসনই দায়িত্বে আসুক না কেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তারা সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে।’ এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এই প্রসঙ্গে জানান, ‘বাংলাদেশের ওপর মার্কিন নির্বাচনের বড় আকারের প্রভাব পড়ার কথা নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘তবে ট্রাম্প যদি প্রেসিডেন্ট হন তিনি ভারত ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বড় সম্পর্ক গড়তে ইচ্ছুক। তিনি যদি আসলেই ভারতের দিকে বেশি মনোযোগী হন, তাহলে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সম্পর্কে কিছু ভাটা পড়তে পারে।’ তাঁর আরো মত, ‘ডেমোক্রেটিকদের সঙ্গে ড. ইউনূসের সম্পর্ক অনেক পুরোনো। তারা এখন বাংলাদেশকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে। ট্রাম্প হয়তো সেই সম্পর্ক নাও রাখতে পারেন।’
এছাড়া বিশ্লেষকরা বলছেন, ডেমোক্র্যাটরা পৃথিবীব্যাপী যে রকম সাহায্য সহযোগিতা করেছে তা হয়ত ট্রাম্প নাও দিতে পারেন। ফলে আমাদের দেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ডেমোক্রেট সরকার যে রকম সাহায্য পাঠাত তাতে হয়ত এখন কিছুটা কমতেও পারে। তবে তারা বলছেন, ট্রাম্প ব্যবসায়ী মানুষ। তার আসাতে হয়ত ব্যবসায়িক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হতে পারে এবং পৃথিবীব্যাপী সৃষ্ট সংঘাত ও উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হতে পারে।
এনইউ/জই