অবশেষে দলীয় লেজুড়বৃত্তির বাইরের কেউ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেলেন।
অভিনন্দন প্রফেসর ড. Muhammad Yeahia Akhter স্যার।
স্যারের কাছে আমাদের সবার পক্ষ থেকে কিছু মৌলিক দাবি রাখছি।
১। ফুলেল শুভেচ্ছা নিবেন না দয়া করে। এসব আসলে ফুল নয়, স্রেফ তেল। বিদায় বেলায় যেন ফুল পান, সম্মানের সহিত বিদায় নিতে পারেন – সেটা নিশ্চিত করুন।
২। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করুন।
৩। ডিপার্টমেন্টের নবীন বরণ, হলের স্পোর্টস ইত্যাদি সহ ভার্সিটির সব প্রোগ্রামে আপনার যাওয়ার দরকার নেই। এসব দাওয়াত পেলে সবিনয়ে না করে দিবেন। কেজি স্কুল থেকে শুরু করে জগতের সব অনুষ্ঠানে আপনি কেন যাবেন?
৪। নিজের ফিল্ডের বাইরের কোন সেমিনার / সিম্পোজিয়াম ইত্যাদিতে আপনার যাওয়ার দরকার নেই। অযথাই সময় নষ্ট। আয়োজকদের এবং আপনার — দুই পক্ষের জন্যই এসব বাড়তি কষ্ট।
৫। সব ডিপার্টমেন্টে ঠিকঠাক ক্লাস হয় কিনা, পরীক্ষা হচ্ছে কিনা, শিক্ষকগণ নিয়মিত আসেন কিনা মনিটরিং সিস্টেম চালু করুন।
৬। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ান। বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে MoU করুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিং বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করুন। শিক্ষকদের ভালো পাবলিকেশনের জন্য প্রণোদনা চালু করুন।
৭। ছাত্র ছাত্রীদের হলে মেধার ভিত্তিতে সীট বরাদ্দ দিন। মানসম্মত খাবার, পড়াশুনার সুন্দর পরিবেশ, পরিচ্ছন্ন ওয়াশ রুম ইত্যাদি নিশ্চিত করুন।
৮। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের প্রতিটি ক্লাস রুমে সাউন্ড সিস্টেম, প্রজেক্টর, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ইত্যাদির ব্যবস্থা করুন। এবং অবশ্যই অবশ্যই সার্বক্ষণিক নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট নিশ্চিত করুন। বিকল্প কিছু ব্যবস্থা রাখুন।
৯। রেললাইন শহীদ মিনার পর্যন্ত বর্ধিত করার ব্যবস্থা করুন। অথবা ক্যাম্পাসে কলকাতার ট্রাম গাড়ীর মতো হোক কিংবা বিকল্প সার্কুলার ট্রান্সপোর্টর ব্যবস্থা করুন। সকল রাস্তায় ফুটপাতের ব্যবস্থা করুন। পর্যাপ্ত শেডের ব্যবস্থা করুন।
১০। চট্টগ্রাম শহরে একটা টিএসসির ব্যবস্থা করুন।
১১। মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়ন করুন। ভালো ডাক্তার নিয়োগ দিন। ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্টের সংখ্যা বাড়ান। এটাকে একটি পুর্ণাঙ্গ মানসম্মত হাসপাতালে পরিণত করুন। শহর ক্লাবে ভালো ডাক্তার নিয়োগ দিন।
১২। ইউনিভার্সিটি স্কুল এন্ড কলেজের মানোন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা চাই।
১৩। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে কমন রুমের ব্যবস্থা করুন। সকল ডিপার্টমেন্টে পরিচ্ছন্ন ওয়াশ রুম নিশ্চিত করুন। সব ফ্যাসিলিটি নিশ্চিত না করে নতুন ডিপার্টমেন্ট খোলা বন্ধ করুন। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে স্টুডেন্ট ইভ্যালুয়েশন সিস্টেম চালু করুন। ড্রপ বক্সের ব্যবস্থা করুন।
১৪। বাইরের কোন কলেজের দায়িত্ব নিবেননা, দয়া করে। ভর্তি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থী/ অভিভাবকগণের জন্য এখন থেকেই স্থায়ী টয়লেট নির্মাণের উদ্যোগ নিন।
১৫। বর্তমান / প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট / মার্কসশীট / ট্রান্সক্রিপ্ট ইত্যাদি উত্তোলনের জন্য অনলাইন সিস্টেম চালু করুন। পেমেন্ট থেকে শুরু করে সবকিছু যেন অনলাইনে হয়, সেটা নিশ্চিত করুন। হয়রানি বন্ধ করুন। ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করুন।
১৬। রেজাল্ট অটোমেশন সিস্টেম চালু করুন। পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যেই রেজাল্ট পাবলিশ করা নিশ্চিত করুন।
১৭। রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর অফিস টাইম আটটা থেকে বিকেল চারটা নিশ্চিত করুন। রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এ অযথাই আগামীকাল আসুন, লাঞ্চের পর আসুন — এই কালচার বন্ধ করুন।
১৮। শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত কল্পে মানসম্মত পিএইচডি, ভালো পাবলিকেশন সহ ভালো রেজাল্টধারী
আবেদনকারীদের যেন নিয়োগ দেয়া যায়, সেটা নিশ্চিত করুন। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আমূল এবং মৌলিক পরিবর্তন আনুন। পনেরো / বিশ মিনিটের ভাইভা নিয়ে নিয়োগের ফালতু সিস্টেম থেকে বের হওয়ার উদ্যোগ নিন। আবেদন প্রক্রিয়া পুরোটা অনলাইন করুন। নিয়োগ বোর্ডে একাডেমিক, সৎ শিক্ষকদের রাখুন। এক্সপার্ট নয় এমন কোন শিক্ষককে নিয়োগ বোর্ডে রাখা যাবেনা। প্রেজেন্টেশন, ডেমো ক্লাস ইত্যাদি নিয়ে পিএইচডি / পোস্ট ডক সহ কোয়ালিফাইড আবেদনকারীদের নিয়োগ নিশ্চিত করুন।
১৯। চবি অ্যালামনাইদের সহযোগিতা নিয়ে ইউনিভার্সিটির জন্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা, বিউটিফিকেশন, ফ্যাসিলিটিজ ডেভেলপ করুন।
২০। কোন লেভেলেই যেন নিয়োগ বাণিজ্য না হয়, সেটা নিশ্চিত করুন।
২১। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে প্রতি তিন মাস পরপর স্টুডেন্ট এডভাইজর কমিটি, চেয়ারম্যান সহ অন্যান্য শিক্ষকগণ ক্লাস প্রতিনিধিদের সাথে মিটিং এর ব্যবস্থা করুন।
২২। ছাত্র সংসদ চালু করুন। কার্যকর ব্যবস্থা নিন।
২৩। ভার্সিটিতে রিগুলার সেমিনার / সিম্পোজিয়াম / কনফারেন্স ইত্যাদি যেন হয়, সেটা ডিনদের মাধ্যমে নিশ্চিত করুন। রিগুলার জব ফেয়ারের আয়োজন করুন। স্টুডেন্ট কাউন্সেলিং এর জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিন।
২৪। ডিন সহ বিভিন্ন একাডেমিক দায়িত্ব ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ায় দলীয় শিক্ষকদের বাইরে কারো ওখানে যাওয়ার সুযোগ নেই। নন একাডেমিক শিক্ষক যেন এসব পদে যেতে না পারে – সেটা নিশ্চিত করুন। সার্চ কমিটি কিংবা অন্য কোন ভালো উপায়ে এটি হতে পারে। একজন শিক্ষককে একাধিক দায়িত্বে রাখা থেকে বিরত থাকুন।
২৫। দলীয় দুর্বৃত্তায়ন, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, র্যাগিং বন্ধে সচেষ্ট থাকুন। সকল ধরণের নিপীড়ন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন।
২৬। এমফিল, পিএইচডি ইত্যাদিতে মানসম্মত পাবলিকেশন আবশ্যিক করা হোক।
২৭। চবি’র বড় বড় বিল্ডিং গুলোর ছাদে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল বসানো হোক। এতে পুরো বিদ্যুৎ চাহিদার একটি অংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসবে। ইউনিভার্সিটির ইউটিলিটি বিল কমবে।
২৮। ট্রান্সপোর্টে অপচয় বন্ধ করা হোক। শহরে কোথাও গাড়ী রাখার ব্যবস্থা করা হোক। শুধু গাড়ী রাখার জন্য এত দূর থেকে যাওয়া আসা করা বিশাল অপচয়।
২৯। চারুকলা ইনস্টিটিউটকে ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হোক।
৩০। আপনার আশেপাশে যেন কোন তেলবাজ শিক্ষক/ কর্মচারী সবসময় ঘুরঘুর না করে সেটা নিশ্চিত করুন।
৩১। অ্যালামনাইদের সহায়তায় একটি কেন্দ্রীয় সহায়তা ফান্ড গঠন করে আর্থিকভাবে অসচ্ছল সকল স্টুডেন্টের জন্য স্কলারশিপের ব্যাবস্থা করা হোক। এতে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হওয়া স্টুডেন্টদের প্রায়োরিটি দেয়া হোক।
#পুনশ্চ
দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র – শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করুন।
এই একটা কাজ করতে পারলে বাকী সব কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে। অর্ধেক এমনিতেই হয়ে যাবে, তেমন কোন উদ্যোগ ছাড়াই।
এতগুলো দাবী, এত এত কাজ দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, স্যার। আপনি ম্যানেজার কাম সিইও।
আর আপনার মধ্যে সততা আছে। কোন পার্সোনাল এজেন্ডা নেই, আপনি দৃঢ়চেতা। আপনার দ্বারা সম্ভব। খুবই সম্ভব। শুরুটা করুন। সব ধীরে ধীরে হবে ইনশাআল্লাহ।
আশা করি, ইতিহাসে আপনার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখার এই সুযোগ হেলায় হারাবেন না।
আপনার জন্য শুভকামনা রইলো, স্যার।
ধন্যবাদান্তে,
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক
প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
(লেখাটি লেখকের নিজস্ব মতামত, চাটগাঁর চোখ সমকালীন প্রসঙ্গ হিসেবে প্রকাশ করেছে মাত্র)