তিন শুন্যের প্রবক্তা,দরিদ্র মুক্ত বিশ্ব গড়তে সামাজিক ব্যবসাতত্ত্বের উপস্থাপক বীর চট্টলার কৃতি সন্তান নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে চট্টলবাসী গড়ে তুলেছিল —”ইউনুস সুহৃদ” নামক একটি প্রতিবাদী সংগঠন। সেদিন গর্জে উঠেছিল বীর চট্টলা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বর্তমান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক ই আজম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর সেকান্দর স্যার,অর্থনীতিবীদ প্রফেসর ড. মঈনুল আলম, মরহুম শাখাওয়াত হোসেন মজনু,আজাদী সম্পাদক আলহাজ্ব এম এ মালেক,সাংবাদিক ওসমান গণি মনসূর, প্রফেসর অধ্যক্ষ আনোয়ারা আলম, অধ্যক্ষ তহরুন সবুর ডালিয়া প্রমূখ সহ আমরা বীর চট্টলার নারী পুরুষ সর্বস্তরের নাগরিক একাট্টা হয়েছিলাম আঁরার চাটগাঁইয়া ইউনুস এর বিরুদ্ধে সকল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস রুখে দিতে।
৩১/০৫/১২ ইং সরকার ড.ইউনুসের তিলে তিলে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে একটি কমিশন গঠন করে।
পরবর্তীতে তা অন্যায়ভাবে দখল করে। নারীর ক্ষমতায়নে জামানত বিহীন ঋণ প্রথা চালু করেন। চট্টগ্রাম গর্জে উঠে।
বিখ্যাত কলামিস্ট ইবনে সাজ্জাদ দৈনিক আজাদী পত্রিকায় তাঁর” বিরস রচনা ” নিয়মিত উপসম্পাদকীয়তে লিখেন ” আঁরার ইউনুছরে লয় এত টালটি ফালটি ক্যায়া ” শীর্ষক এক রম্য রচনায় সরকারকে হুশিয়ার করে দেন।
চট্টগ্রামের আজাদী ও অন্যান্য পত্রিকা গুলো তাঁর বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কন্ঠে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। ইউনূস সূহৃদ নামক সংগঠন এর পতাকাতলে সমবেত হয়ে নানা প্রতিবাদী কন্ঠ উচ্চারিত হতে থাকে।
জালিম সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে চট্টলবাসী প্রফেসর ড ইউনুসের নেতৃত্বে স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলো তা আজ পূর্ণ হতে চলেছে। মজলুম মানুষটির তিলে তিলে গড়া গ্রামীন ব্যাংক দখল, তাঁকে নানা মিথ্যা হয়রানী মূলক মামলা দিয়ে নিপীড়ন,নির্যাতন তিনি হাঁসি মূখে সহ্য করে গেছেন।
তাঁর বন্ধু-বান্ধব ও সুহৃদরা মিলে তাঁর নিজের জেলা শহর চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘চিটাগাং সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার’। এ-প্রতিষ্ঠান থেকে বিনা সুদে ঋণ নিয়ে অনেকেই পর্যায়ক্রমে স্বাবলম্বী হতে শুরু করে।
মহামারী কভিট ১৯ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিগে এ-মহৎ কমিটির কর্মকান্ড পুরোপুরি সচল রাখা সম্ভব হয়নি।সকল নির্যাতন, হয়রানি, অপমান ও হয়রানির অবসান হয়েছে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের ত্যাগ, জীবন ও রক্তের বিনিময়ে।
আমাদের চাঁটগাইয়া ইউনুস আজ দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব লাভে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা আরো আনন্দিত আমাদের আরেক সহযোদ্ধা ও নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক ই আজম বীর প্রতীককে বর্তমান সরকার এর উপদেষ্টা নিয়োগ করাশ। আমরা আপনার ও আপনাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বৈষম্যমুক্ত সুখী বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে চট্টলবাসী সবসময় আপনার সাথে ছিলাম,আছি- থাকবো ইনশাআল্লাহ।
ইউনূস সুহৃদ থেকে চিটাগাং সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার (CCBC) এর পক্ষে প্রফেসর মুহাম্মদ সেকান্দর খান, সাবেক চেম্বার প্রেসিডেন্ট আমির হুমায়ূন মাহমূদ চৌধুরী,একুশ পদক প্রাপ্ত আজাদী সম্পাদক লায়ন এম. এ মালেক, ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক, সাংবাদিক ওসমান গণি মনসুর,কলামিস্ট শাখাওয়াত হোসেন মজনু, মোসলেহ উদ্দিন মোঃ খালেদ, মোঃ মুজিবুল কাদের, মোঃ কালাম উদ্দিন, জিয়া উদ্দিন খালেদ, এডভকেট জিয়া হাবীব আহসান, লায়ন মোঃ মোস্তাক হোসাইন, আবিদা সুলতানা, এডভোকেট সৈয়দ আনোয়ার হোসাইন, ডা.কিউ এম অহিদুল আলম, সেতারা গাপ্পার, ব্যাংকার মুজিবুল কাদের,মোঃ আমিরুল ইসলাম, মোঃ আব্দুল বাতেন, মোঃ আমিনুল হক, ফয়সাল মোঃ আশরাফ,এড মোহাম্মদ ইদ্রিস, ইয়াসিন মাবুদ,নাসির উদ্দিন চৌধুরী প্রমূখ সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা মিলে গড়ে তুলে ছিলেন ” চট্টগ্রাম সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার ” নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি। আমরা আন্তর্জাতিক সোস্যাল বিজনেস সামিট গুলোতে অংশ নিয়ে আমাদের কার্যক্রম তুলে ধরি। যা শুনে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়।
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি। এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ, সমবায় আন্দোলন ও গ্রাম উন্নয়নে আমার মরহুম পিতা এডভোকেট আবু মোহাম্মদ য়্যাহ্য়্যা, মাহাবুব আলম চাষী, বাবু সন্তোস দাশ, প্রয়াত সি.সি.বর্মন, ডাঃ আবুল কাসেম এম. পি, দৈনিক আজাদী সম্পাদক প্রফেসর মোহাম্মদ খালেদ, সাংবাদিক ফজলুল রহমান, ননী গোপাল চৌধুরী, প্রফেসর এ.কে.এম. আহমেদ উল্লাহ, ড. এ. এইচ. লতিফি, মনোতোষ দাশ, আনোয়ারুল আজিম (ভোলা মিয়া) প্রমুখের সাথে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এর নাম অনায়াসে এসে যায়।
স্বনির্ভর গ্রাম, স্বনির্ভর দেশ গড়তে তাঁরা জাতির জনক স্বাধীনতার স্থপতি মরহুম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে যুগপৎ ভাবে কাজ করে যান । এদেশের সমবায় আন্দোলনে তাদের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ।
মুক্তিযুদ্ধে প্রফেসর ইউনুসের অবদান প্রসঙ্গে ইউ এস প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক সমাজ কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত স্মরণীকা ‘গ্রামীণ’ এর ৩২ পৃষ্ঠায় কাজী আশরাফ হোসেন রচিত ‘গ্রামীণ ব্যাংকঃ ইউনূসের চিন্তাধারা’ শীর্ষক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, “১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ (চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘোষণা শোনার পর টেনেসির ন্যাসভিলে অবস্থিত হাতে গোনা যে কয়জন বাঙ্গালীকে পেয়েছেন তাদের সবাইকে নিয়ে (মোট ৬ জন) ২৯ মার্চ এক বৈঠকে বসেন তিনি এবং অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তে পৌছেন।
আর তা হলো এই রকম- অনুষ্ঠানে আগত ৬ জনের মধ্যে ৫ জনই এই স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা প্রেক্ষাপটকে আরো বেশী বেশি খোঁজ খবর নেওয়ার উপর জোর দেন ।
ঠিক তখনই আজকের এই নোবেল বিজয়ী দেশ প্রেমিক মুহাম্মদ ইউনূস দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন আমাদের এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে । আমি আমার নিজেকে স্বাধীন বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসাবে ঘোষণা দিলাম- যারা আমার সাথে হাত মিলাবেন না তারা আমার চোখে পাকিস্থানী এক কথায় বাংলাদেশের শত্রু।
অগাধ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত সকলেই বাংলাদেশের পক্ষ নিল এবং তাৎক্ষনিকভাবেই গঠিত হলো বাংলাদেশী নাগরিক সমিতি (উদ্ধৃতি সেলিনা সিরাজ, শিপ্রা চক্রবর্তী)” । এইভাবে ড. ইউনূসের দেশপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায় ।
১৯৭৩ সালের ২৬, ২৭ ও ২৮ শে সেপ্টেম্বর বৃহত্তর চট্টগ্রাম থানা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি সমূহের ফেডারেশন কর্তৃক আযোজিত এক কৃষি সমবায় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় । যার প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন তদানীন্তন কুমিল্লা বি.এ.আর.ডি এর ভাইস চেয়ারম্যান জনাব মাহবুব আলম চাষী। যার সভাপতি ছিলেন প্রফেসর ড. ইউনূস ও সম্পাদক ছিলেন আমার মরহুম পিতা এডভোকেট আবু মোহাম্মদ য়্যাহ্য়্যা। আমার পিতা ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে রাউজান হাটহাজারী নির্বাচনী এলাকায় মরহুম ফজলুল কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দৈনিক আজাদী সম্পাদক প্রফেসর মোহাম্মদ খালেদের প্রস্তাবক ছিলেন । মুক্তিযুদ্ধে আমার পিতার সাহসিকতার ও ব্যাপক ভূমিকার জন্য দেশ স্বাধীন হলে নিজ গ্রামের (গুমানমর্দন, হাটহাজারী) সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাঁকে বিপুলভাবে সম্বর্ধনা জানান ও ২টি স্বর্ণপদক এবং নগদ অর্থ সম্মাননা প্রদান করেন।
কৃষি ক্ষেত্রে সমবায়ের মাধ্যমে সবুজ বিপ্লবের লক্ষ্যে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে উক্ত ব্যক্তিগণ দিন রাত কাজ করে যান ।
ষাটের দশকে তাদের প্রচেষ্টায় চট্টগ্রামে নিবিড় চাষাবাদ ইরি, বেরো ধান চাষের প্রবর্তন হয় ।
পরবর্তীতে এতদাঞ্চলে সমবায়ের মাধ্যমে ‘কানী প্রতি একশ, যার নাম সোনালী শ’ আন্দোলন সফল হয় ।
প্রফেসর ড. ইউনূসের নাম হাটহাজারী জোবরা গ্রামের তেভাগা আন্দোলনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে ।
এক সময় তিনি বন্ধক বিহীন বিনিযোগ পদ্ধতির মাধ্যমে গ্রামীন ব্যাংকের উদ্ভব ঘটান । আজ তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী ।
নোবেল বিজয়ী এ মানুষটির নাম এখন উচ্চারিত হয় শ্রদ্ধায়, প্রগার ভালোবাসা ও গভীর আন্তরিকতায় । দারিদ্রর মুক্তির লক্ষ্যে তার ব্যাতিক্রমী উদ্ভাবন ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের সাফল্য তাঁকে দিয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি । আজ তিনি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন অসীম সাহস আর যোগ্যতা দিয়ে ।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রিও ২০১৬ অলিম্পিকের মশাল বহন করেন প্রফেসর ইউনূস । বিপুল করতালি ও হর্সধ্বনির মধ্য দিয়ে ২০০ মিটার হেঁটে দেখালেন আমাদের গর্বের ইউনূস । একহাতে মশাল আর অন্য হাত তুলে তিন আঙ্গুল প্রদর্শন, যার উদ্দেশ্য ছিল ‘তিন শুন্য’র লক্ষ্য অর্জনে বিশ্ববাসীকে উদ্ধুদ্ধ করা । শুন্য’র অর্থ হচ্ছে- সামাজিক ও পরিবেশ লক্ষ্য অর্জনে ‘শুন্য দারিদ্র’, “শুন্য বেকারত্ব’ ও ‘শুন্য এ ‘তিন নীট কার্বন নিঃসরণ” ।
তিনি অলিম্পিকের সকল কর্মসূচিতে একটি সামাজিক মাত্রা যোগ করার জন্য প্রচারনা চালান যা তাঁর ভাষণের মূল বক্তব্যেও প্রতিফলিত হয় । ‘চাকরী নেব না, চাকরী দেব’ ; “মানুষ কোনভাবে বেকার হতে পারে না” তাঁর এসব প্রানজয়ী, কালজয়ী বক্তব্য আমাদের জাগিয়ে তুলে । তিনি আমাদের প্রেরনার বাতিঘর । দেশ গড়ায় বিশ্ব গড়ায় এমন চেতনা এ মুহূর্তে অত্যন্ত প্রয়োজন ।
সামাজিক ব্যবসার ধারনার মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর তাঁর সহজ সূত্র বিশ্ববাসীকে আকর্ষিত করেছে । তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে আমরাও চট্টগ্রামে গড়ে তুলেছি সামাজিক ব্যবসা কেন্দ্র ‘চিটাগং স্যোসাল বিজনেস সেন্টার লিমিটেড’ (সি.এস.বি.সি.এল) ।
দৈনিক আজাদী সম্পাদক আলহাজ্ব এম এ মালেক, প্রফেসর সিকান্দার খান, পূর্বদেশ সম্পাদক সাংবাদিক ওসমান গনি মনসুর, ব্যবসায়ী আমির হুমায়ুন মাহামুদ চৌধুরী, সংগঠক ও কলামিষ্ট শাখাওয়াত হোসেন মজনু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম, চিকিৎসক ও কলামিস্ট ডাঃ কিউ, এম, অহিদুল আলম, শিক্ষাবিদ ড. মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, সেতারা গাফফার, কানিজ ফাতেমা মুন্নি, ব্যাংকার মোঃ মুজিবুল কাদের, এডভোকেট মুহাম্মদ ইদ্রিস, প্রফেসর মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী খালেদ, আবিদা সুলতানা, শিল্পপতি মোঃ নাসির উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ সহ মোট ৩১ জন এর সহিত আমারও সৌভাগ্য হয় উক্ত মহৎ কাজে সম্পৃত্ত হওয়ার ।
ইতিমধ্যে উক্ত সেন্টার বিপুল সংখ্যক উদ্যোমী যুবককে আর্থিক সহায়তা দিয়ে সামাজিক ব্যবসায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে । এই কেন্দ্র চত্তগ্রামে সামাজিক ব্যবসাকে উৎসাহিত এবং এর সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল।
গ্রামীন ব্যাংকের দারিদ্র দূরীকরণের সফল উদ্যোগের ধারায় পৃথিবী ব্যাপি সামাজিক ব্যবসার সকল সম্প্রচারের ও এর প্রচার অভিযানে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্মভুমি থেকে এ উদ্যোগ গ্রহন করার প্রয়োজন অনুভূত হয় ‘ইউনূস সুহৃদ চট্টগ্রাম’ এর সুহৃদের মধ্যে ।
মুলতঃ এই সংগঠনের উদ্যোগে এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তায় ২০১৪ সালে এ কেন্দ্র গঠিত হয় এবং প্রফেসর ড. ইউনূসের উপস্থিতিতে এ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় । ২০১৪ সালে নভেম্বর মাসে চিটাগং স্যোসাল বিজনেস সেন্টার লিঃ এর চেয়ারম্যান শ্রদ্ধেয় প্রফেসর মু. সিকান্দর খান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর আমির হুমায়ূন মাহমুহ চৌধুরী ডিরেক্টর জনাব মোহাম্মদ আব্দুল মালেক (দৈনিক আজাদী সম্পাদক) ফ্লোবাল স্যোসাল বিজনেস সামিট, মেক্সিকোতে অংশগ্রহণ করেন ।
চিটাগং স্যোসাল বিজনেস সেন্টার লিঃ পাওয়ার পয়েন্ট প্রজেনটেশানের মাধ্যমে সিএসবিসিএল এর সাংগঠনিক কাঠামো, আদর্শ এবং কর্মপন্থা উপস্থাপন করলে সেখানে তা ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন । ড. ইউনূস ভিক্ষাবৃত্তিকেও ঘৃনা করেন । তিনি দান’কে অর্থবহ করে তুলেন তা রিসাইক্লিং- পদ্ধতির মাধ্যমে ।
সামাজিক ব্যবসায় দানকৃত অর্থ বহুগুনে বার বার ফিরে আসে আরো বেশী বিনিযোগ শক্তি নিয়ে । আমার মরহুম পিতার এ- ঘনিষ্ট জন মুক্তমনের সহজ সরল চাঁটগাইয়া মানুষটির সান্নিধ্যে যখনি গিয়েছি তখনই কাছে টেনে নিয়ে অন্যবদ্য ভালোবাসা ও প্রাণখোলা হাসির রশ্নিতে ভাসিয়ে দিয়েছেন তিনি । মানুষকে আপন করে নেয়ায় এ এক যাদুকরি শক্তি তাঁর মাঝে কাজ করে ।
ইউনূসের নোবেল বিজয়ে সেদিন মনে হয়েছে কোন ব্যক্তি নয় ‘বাংলাদেশ নোবেল পেয়েছে’ । কিন্তু তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্র থেকে উপযুক্ত সম্মান পাওয়া দূরের কথা বরঞ্চ বঞ্চনা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ।
বিশ্ববিখ্যাত “ওয়ার এন্ড পিস”- এর লেখক লিউ টলস্তযের মতো সাহিত্যের খনি যদি অত্যাচারী স্ত্রীর দানব আচরনে বাধ্য হয়ে অসমাপ্ত উপন্যাসটি টেবিলে রেখে ৮২ বছর বয়সে বনবাসী হতে পারেন । তাহলে তিল তিল করে গড়ে তোলা গ্রামীণ ব্যাংকটি গায়ের জোরে মালিকানা দখলের কষ্টে ড. ইউনূস যেন কোন দিন বাংলাদেশকে ভুলে না যান।
তিনি এদেশের অর্থনীতিকে জোরদার করে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে গড়ে তুলতে যে সংগ্রাম শুরু করেছেন, তা আমাদের মুক্তির সংগ্রাম । কেননা স্বাধীনতা অর্জন অপেক্ষা তাকে রক্ষা করা আরো কঠিন এবং মহান দায়িত্ব ।
ড. মার্টিন লুথার কিং নিপীড়িত কৃতদাস জাতিগোষ্ঠিকে নিষ্পেষণ মুক্ত করতে ওয়াশিংটনে ১৯৬৪ সালে দেয়া ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ বক্তৃতা মানবতার মাইলস্টোন হিসেবে পেয়েছে । মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তিনি নোবেল পেলেন ।
ভিয়েতনাম যুদ্ধে গণহত্যার বিরুদ্ধে বক্তৃতার অপরাধে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তাঁকেও হত্যা করা হলো । মুক্ত চিন্তার অপরাধে সক্রেটিসকেও বিষপান করিযে হত্যা করছিল ধর্মান্ধরা । তারপরও সক্রেটিস, মার্টিন লুথার আজো জীবিত তাদের মৃত্যু নেই । সিভিল রাইটস এ্যাক্টের ৫৪ বছরের মাথায় হোয়াইট হাউজে কালো প্রেসিডেন্ট ।
অথচ ২ যুগ আগেও সেখানে কালো আর সাদা মানুষের বিস্তর বৈষম্য বা পার্থক্য ছিল । উন্নত বিশ্বে গুণীজনদের সম্মান দিতে কোন কার্পন্য দেখিনি ।
দলমত নির্বিশেষে সকল জাতীয় নেতা ও ব্যক্তিত্বদের সম্মান দেখানোর ব্যবস্থা সেখানে রযেছে । ফলে তারা বিশ্বের শাসক । নিজের পছন্দের নেতাদের নাম তুলে ধরতে আপত্তি নেই । কিন্তু অন্যদের নাম মুছে দেয়ার প্রবনতা অশুভ এ প্রক্রিয়া শুভ বুদ্ধির পরিচায়ক নয় । ড. ইউনূস প্রসঙ্গে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের ভাষায়
বলতে হয়
“একদিন যবে হারিয়ে যাবো
আমার মর্ম বুঝবে,
অস্ত রবির সন্ধ্যা তারায়
আমায় কবর খুঁজবে । ”
সামাজিক ব্যবসায় পৃথিবীতে অনন্য বিপ্লব সৃষ্টিকারী, দারিদ্র বিমোচন প্রবক্তা এবং শান্তিতে নোবেল বিজয়ী চট্টলার গৌরব এদসঙ্গে ইউনূস বাঙ্গালী জাতির অহংকার ।
পতিত সরকার না পারলেও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বীর মুক্তিকামী শিক্ষার্থীরা তাঁকে উপযুক্ত মর্যাদায় ভূষিত করেছে। তিনিও তাঁর সন্তানদের আহ্বান ফিরিয়ে দিতে পারেননি।
আমাদের শ্রেষ্ট সন্তানদের যথোপযুক্ত শ্রদ্ধা ও সম্মান দিয়ে বিশ্বের বুকে নিজেকে একটি মর্যাদাবান সম্মানিত জাতি ও মুক্ত চিন্তার দেশ হিসেবে পরিচিত ঘটাই । ড. ইউনুস দীর্ঘজিবি হোন।
লেখক : আইনবিদ, কলামিষ্ট, সু-শাসন ও মানবাধিকার কর্মী।