ফটিকছড়ির ছেলে মোস্তাকিম। তার মা নাসরিন আক্তার একজন কিডনীরোগী ছিলেন।
তাঁকে নিয়মিত চমেক হাসপাতালে যেতে হতো মা’র ডায়ালাইসিস করানোর জন্য।
গত বছরের শুরুতে ডায়ালিসস ফি বাড়িয়ে দেয় চমেক হাসপাতাল কর্কৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনরা আন্দোলনে নামেন। টানা কয়েকদিন ধরে চলা এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত বছরের ১০ জানুয়ারি বিক্ষোভকারীরা চমেক হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করেন।
এসময় ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ, অনুরোধ করে আন্দোলনকারীদের, তাঁরা যেন সড়ক ছেড়ে দেন।
আন্দোলনকারীরা সড়ক না ছাড়ার ঘোষণা দেন,শুরু হয় বাকবিতন্ড, বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজিম উদ্দিন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। মুঠোফোন বের করে বিক্ষোভকারীদের ভিডিও ধারণ করতে থাকেন। আর তাতে বেড়ে যায় উত্তেজনা। এরপর একযোগে আন্দোলনকারিরা সবাই ওসির বিরুদ্ধে হইচই শুরু করেন এবং ভিডিও ডিলিট করার দাবি জানান।
এক পর্যায়ে মোস্তাকিমসহ আরও কয়েকজন ওসির সেই মোবাইল সরিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে হাতাহাতিতে ওসির মোবাইল মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়। এরপর ওসি মোস্তাকিমকে পেটাতে পেটাতে চমেকের বিপরীতে এপিক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেও তাকে আরেক দফা মারধোর করা হয়।
কিছুক্ষণ পর এপিক হাসপাতালের সামনে থেকে আরও একজনকে ধরে ভেতরে নিয়ে যান ওসি। পাশাপাশি অন্য পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেন।
পরবর্তিতে একজনকে ছেড়ে দিলেও থানায় নিয়ে যাওয়া হয় মোস্তাকিমকে।
বাইরে যখন এসব ঘটছিল মোস্তাকিমের মা তখন চমেক হাসপাতালের ভেতরে ডায়ালাইসিস করাচ্ছিলেন। হাসপাতালে থাকতে তিনি শোনেন তার ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। কান্না করতে করতে অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি হাসপাতাল থেকে সরাসরি পাঁচলাইশ থানায় চলে যান। ছেলেকে ছাড়াতে সকল চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন মা নাসরিন।
এরপর ওইদিন রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় মোস্তাকিমকে। এবং ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান করেন। পরে জামিন পেয়ে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন প্রসঙ্গে ওসির বিরুদ্ধে মামালা করলেও মামলটির সত্যতা পায়নি বলে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি।
আলোচিত সেই মোস্তাকিমের কিডনীরোগী মা নাসরিন আক্তার আর বেঁচে নেই । মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) ভোরে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিসৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মো. মোস্তাকিম জানান, আম্মুকে ফটিকছড়ি গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে তাকে আব্বুর কবরের পাশে দাফন করা হবে।