বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও এক ‘গোয়েন্দা কাহিনী’

নিজস্ব প্রতিবেদক

একজন এল, পরিচয় দিল গোয়েন্দা সংস্হার লোক।পরিচয়ের পর ভাব হলো দুজনের। যার সাথে কথিত গোয়েন্দার ভাব হলো তিনি নগরীর একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মকর্তা। সখ্যের পর গোয়েন্দা কর্মকর্তা পরিচয় দানকারী লোক টাকা চাওয়া শুরু করল, আর তার সাথে ভাব হওযা ব্যক্তিও টাকা দিলেন দফায় দফায়। নানা অজুহাতে টাকা চাওয়ার পর সন্দেহ এবঙ কথিত গোয়েন্দা ব্যক্তির সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া শুরু।অত:পর জানা গেল তিনি একজন ভুয়া গোয়েন্দা,মূলত পেশাদার প্রতারক।এভাবে গল্পের মতোই এগোয় ‘গোয়েন্দা কাহিনী’।

অবশেষ প্রতারণার অভিযোগে সোমবার তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গোয়েন্দা কর্মকর্তা পরিচয়ে ওই ব্যক্তি নগরীর একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কয়েক দফায় টাকা হাতিয়ে নেয়। সর্বশেষ অতিথি সেজে সেখানে ইফতার করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্দেহ হলে তারা ওই ব্যক্তিকে আটকে পুলিশে দেন।

রোববার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায় নগরীর চকবাজারে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।

গ্রেফতার চম্পক বড়ুয়া (৫৫) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া জেলার বাসিন্দা। বাসা নগরীর চান্দগাঁও থানার ফরিদার পাড়া এলাকায়।

প্রতারণার মাধ্যমে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছেন পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক ওয়ালী আশরাফ খাঁন।

ওয়ালী আশরাফ খাঁন বলেন, ‘গত ফেব্রুয়ারিতে চম্পক বড়ুয়া নামে ওই ব্যক্তি আমার অফিসে এসে একটি গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত বিমানবাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে নিজের পরিচয় দেন। দুয়েকবার আসা-যাওয়ার পর তার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক হয়। এর মধ্যে একদিন এসে তিনি ও তার টিম অভিযানে যাচ্ছেন এবং এজন্য কিছু খরচ দরকার বলে আমার থেকে টাকা নেন। অবশ্য টাকাগুলো সংস্থা থেকে অফিসিয়ালি পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন। আরেকবার স্ত্রীর চিকিৎসার কথা বলে টাকা নেন। এভাবে আমার কাছ থেকে মোট ৯০ হাজার টাকা নেন।’

‘রমজানের শুরু থেকে প্রতিদিন ইফতারের আগে আমাদের প্রতিষ্ঠানে এসে বসে থাকেন। আমরা অফিসের স্টাফ এবং রোগীসহ দর্শনার্থীদের মধ্যে যারা উপস্থিত থাকেন, তাদের ইফতারের প্যাকেট দিয়ে থাকি। চম্পকও প্রত্যেকদিন এখানে ইফতার করেন। এর মধ্যে একদিন এক রোগীর স্বজন তাকে চিনতে পেরে আমাদের একজন স্টাফকে সতর্ক করেন। এরপর আমি গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে যোগযোগ করে জানতে পারি, এই ব্যক্তি একজন প্রতারক। গতকাল (রোববার) ইফতারির পর তাকে আমরা ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছি,’ – বলেন ওয়ালী আশরাফ খাঁন।

মামলার এজাহারে তিনি অভিযোগ করেছেন, চম্পক বড়ুয়া অভিযানে যাবার পর কথা বলে তার কাছ থেকে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৮ হাজার টাকা, ২০ ফেব্রুয়ারি ২২ হাজার টাকা, স্ত্রীর অসুস্থতার কথা বলে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২৫ হাজার টাকা এবং ৬ মার্চ আরও ২৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ‘পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজারের কাছ থেকে বিমানবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য পরিচয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি একজন পেশাদার প্রতারক বলে আমরা জানতে পেরেছি। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’

পুরো কাহিনী শোনা কারো কারো প্রশ্ন গোয়েন্দা সংস্হার লোক পরিচয় দিলেই টাকা দিতে হবে কেন? এখানে দুর্বলতাটা কি? গোয়েন্দাপ্রীতি নাকি গোয়েন্দাভীতি?
একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সে টার্গেট করল, আর অমনি দফায় দফায় টাকা বেরিয়ে গেল?

চাটগাঁর চোখ/এমএ/জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর