মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

চসিক সংশ্লিষ্টরাই প্রিমিয়ারের ট্রাস্টি বোর্ডে, মেয়রকে প্রধান

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের হওয়ার পর অবশেষে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিবোর্ড গঠন করে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য পদাধিকার বলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়রকে চেয়ারম্যান করে নয় সদস্যের বোর্ড গঠন করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোছা. রোখছানা বেগম।

ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ৩৫ (৭) ধারা অনুযায়ী বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টিজের পরিবর্তে একই আইনের ৬ (১) ধারা অনুযায়ী নয় সদস্যের সমন্বয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠন করা হলো।’

যারা ট্রাস্টি বোর্ডে থাকছেন- পদাধিকার বলে বর্তমান চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন চেয়ারম্যান। এছাড়া পদাধিকার বলে সদস্য হিসেবে থাকবেন আরও আটজন। তারা হলেন— সদ্য সাবেক চসিক মেয়র, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস চ্যান্সেলর, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, চসিক সচিব, চসিকের শিক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, চসিকের দুইজন প্যানেল মেয়র এবং চসিকের হিসাব ও নিরীক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান।

এর আগে, গত ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ পদ পূরণের জন্য মোট নয়জনের নাম প্রস্তাব করে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

৫ আগাস্টের পর থেকে চসিকের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি। একদল শিক্ষার্থীর আন্দোলনের মুখে ৭ ডিসেম্বর উপাচার্য অনুপম সেনের পদত্যাগের পর বর্তমানে  উপাচার্য পদটি শূন্য রয়েছে।

সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র এবং স্থায়ী কমিটিগুলোর চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পান নির্বাচিত কাউন্সিলররা। বর্তমানে সিসিসিতে নির্বাচিত কোনো কাউন্সিলর নেই। সে হিসেবে নবগঠিত বোর্ড অব ট্রাস্টিজের নয়টি পদের মধ্যে ছয়টিই খালি থাকবে।

এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এখন প্যানেল মেয়ররা নেই, কিন্তু স্থায়ী কমিটিগুলো গঠন করা সম্ভব। সেগুলো গঠন হলে স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানদের পাওয়া যাবে। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মেয়র মহোদয় সভা আহ্ববানের নির্দেশ দিয়েছেন। সভায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

নিজে মেয়র থাকাকালে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে করপোরেশনের ‘হস্তক্ষেপ’ ঠেকাতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ওই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের জুনে দেওয়া রায়ে আদালত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও ব্যবস্থাপনার এখতিয়ার সিটি করপোরেশনের নেই বলে সিদ্ধান্ত দেয়।

পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে দেওয়ানী আদালতের দারস্থ হতে বলেছিল উচ্চ আদালত। ওই রিটের প্রেক্ষিতে তখন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি পরিচালনায় করপোরেশনের হস্তক্ষেপ চেয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) দেওয়া একটি চিঠির কার্যক্রম স্থগিত করেছিল উচ্চ আদালত।

গত ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে এ বিষয়ে ইউজিসির করা লিভ টু আপিলের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের আদেশটির কার্যকারিতা স্থগিত করে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত। ২০১৬ সালে উচ্চ আদালতের আদেশের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের হাতেই ছিল। সেসময় তারা যে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন করেছিলেন তাতে চেয়ারম্যান পদে ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন ও ছোট ছেলে বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন, এস আলম গ্রুপের তিন কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ, আবদুস সামাদ লাবু ও মোহাম্মদ শহীদুল আলম। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন, আওয়ামী লীগ নেতা বিপ্লব বড়ুয়া, নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, আওয়ামী লীগ নেতা রেমন্ড আরেং, প্রকৌশলী শহীদুল আলম এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবিহা মূসাও ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায়।

তবে গত আগস্টের পর থেকে তারা আর জনসম্মুখে আসছেন না। এর মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। ফলে তারা হয়ত কেউ পলাতক, কেউবা আত্মগোপনে।

এনইউ/জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর