নগরীতে নির্মাণাধীন বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করছে সিডিএ। এতে সংস্থাটির প্রতি নগরবাসীর আস্থা ক্রমে বাড়ছে। তবে বিগত সরকারের আমলের রাগব বোয়ালদের অবৈধ স্থাপনাগুলোতে সংস্থাটি হাত দেয় কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। ইতোমধ্যে চকবাজার চট্টেশ্বরী রোডে নালার উপর নির্মিত চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর অননুমোদিত, কথিত পৈত্রিক ৬ তলা ভবনটির বিরুদ্ধে সিডিএ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তা নিয়ে নগরবাসীর কৌতূহল আছে।
অভিযোগ রয়েছে চট্টেশ্বরী রোড এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টিকারী এ ভবনটি নিয়ে ইতোমধ্যে পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও সিডিএ নির্লিপ্ত। নানা অজুহাতে করছে কালক্ষেপন।
এদিকে আজ চট্টগ্রাম নগরীতে নির্মাণাধীন ৬টি স্থাপনায় অভিযান চালিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় অনুমোদন ছাড়াই ভবন নির্মাণের অভিযোগে নির্মিতব্য ৬টি স্থাপনায় ২৬টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়। পাশাপাশি স্থাপনাসমূহের মালিকদের সাড়ে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
নগরীর পাহাড়তলী থানার বৌ বাজার, পানিরকল এলাকা ও ডিটি রোডে এই অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আফরোজ চৌধুরী, অথরাইজড অফিসার-২ তানজিব হোসেন এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও ইমারত নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান এজিএম সেলিম।
অথরাইজড অফিসার তানজিব হোসেন বলেন, অনুমোদন ছাড়া স্থাপনা নির্মাণ করায় আমরা ৬টি স্থাপনায় অভিযান চালিয়ে ২৬টি দোকান উচ্ছেদ করেছি। পাশাপাশি স্থাপনার মালিকদের সাড়ে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের নির্দেশে এই অভিযান চালানো হয়েছে।অবৈধভাবে নির্মিত ভবনসমূহের বিরুদ্ধে সিডিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়।
নালার ওপর সাবেক মেয়রের পৈত্রিক বাড়ি : এদিকে চকবাজারের চট্টেশ্বরী রোডে নালার ওপর সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর ছয়তলা পরিবারিক একটি ভবন রয়েছে। ভবনটি নির্মাণের সময় সিডিএর নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সিডিএ, সেটাই এখন ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে।
জানা যায়, ‘হারুন অর রশিদ চৌধুরী ভিলা’ নামে ওই ভবনটি কোনো কাগজপত্র ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে ১৮ বছর ধরে। অভিযোগ আছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে রেজাউলের পরিবার এ ভবন গড়ে তোলে। ভবনটি থেকে ভাড়াও আদায় করছে পরিবারটি। রেজাউলের ভাই নজরুল করিম চৌধুরী এখন ভাড়া আদায় করছেন বলে জানান ভবনটির দারোয়ান।
গণমাধ্যমের কাছে নজরুল করিম চৌধুরী এটি তাদের পৈতৃক সম্পদ বলে দাবি করেছেন। ১৯৫৬ সালে তাঁর বাবা জায়গাটি কিনে সন্তানদের কাছে আমমোক্তারনামা করেন বলে তাঁর দাবি। কিন্তু এটির পক্ষে সিডিএতে কোন কাগজপত্র জমা দেননি তিনি বলে জানায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
কাগজপত্র ছাড়াই ছয় তলা ভবনের অনুমোদন কীভাবে হলো– এমন প্রশ্নের জবাবে সদুত্তর দিতে পারেননি সিডিএর কেউ। অথরাইজড অফিসার বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানানো হলেও এ নিয়ে ভবনের ব্যাপারে দৃশ্যমান কিছুই করেনি।
তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রভাব খাটিয়ে কাগজপত্র ছাড়াই এ ভবন তৈরি করা হয়। ১৮ বছর ধরে এটি ভোগদখল করছে সাবেক মেয়রের পরিবার।
এ ভবনের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রেজাউলের ভাইয়ের পক্ষে সুমন নামে এক ব্যক্তি ভাড়ার টাকা ওঠাচ্ছেন। সিডিএ কীভাবে ছয় তলা এ ভবনের অনুমোদন দিল, তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। এমন অনিয়মের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা উচিত।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড সদস্য জাহিদুল করিম কচি বলেন, ভবনের মালিক যেই হোক, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে ভবন নির্মাণে অনুমোদন নিতে হবে। এটি আগামী বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি তুলব। নিয়মতান্ত্রিকভাবে এর তদন্তও হওয়া উচিত।
এদিকে নগরীর চকবাজার এলাকায় কাগজপত্র ছাড়া সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর পরিবারের ছয় তলা ভবন ওঠা প্রসঙ্গে সিডিএর অথরাইজড অফিসার তানজিব হোসেন বলেন, ‘এটি নিয়ে কথা উঠেছে এখন। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছি আমরা। অনেক আগে এ ভবন উঠেছে। আমি তখন দায়িত্বে ছিলাম না।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী নগরে ভবন নির্মাণের সময় আটটি বিষয়ে তদারকি করার কথা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ)। কিন্তু আমরা এটি সঠিকভাবে করতে পারছি না। অনেক সময় পরিস্থিতির কারণেও নমনীয় হতে হয় সিডিএকে।’
এছাড়া নালার ওপর প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা এর অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলেছি। আরও যেসব অবৈধ ভবন নালা ও খালের ওপর গড়ে উঠেছে, সেগুলোও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ এসময় তিনি লোকবল সংকটের কারণে তদারকিতে গাফেলতির কথা স্বীকার করেন।
এনইউ/জই