বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

সৌন্দর্যের সাথে সুনাম বাড়লে মানুষ টিকিট কেটে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে আসবে : উপাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘একাডেমিক এক্সিলেন্স’ যোগ করতে পারলেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও মর্যাদা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। তখন মানুষ টিকিট কেটে এ বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে আসবেন। এ লক্ষ্য অর্জনে চবি বর্তমান প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। চবি ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার এসব কথা বলেন।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টায় চবি মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মোঃ কামাল উদ্দিন ও চবি মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ শাহাদাত হোসেন।

৫০ বছর পূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক, চবি ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের পরিচালক প্রফেসর ড. শেখ আফতাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্পন্সর প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া হোল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উক্ত ইনস্টিটিউটের এলামনাই জনাব সোহেল ইবনে সাত্তার। অনুষ্ঠানে ইনস্টিটিউটের এলামনাইর দেয়া ২০ লক্ষ টাকার অনুদানের ঘোষণা দেন উক্ত ইনস্টিটিউটের প্রফেসর সাইদুর রহমান চৌধুরী।

চবি উপাচার্য বলেন, ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী একটি ইনস্টিটিউট। প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে যখন আমি নিজেকে চিন্তা করি, তখন আমি আবেগাপ্লুত হয়ে যাই। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা অনেক বেশি ভালোবাসি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর সমাজ সংস্কার ও রাষ্ট্র মেরামতের এক অভূতপূর্ব সুযোগ এসেছে। একই সুযোগ ১৯৭১ সালে একবার এসেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, অনৈক্য ও বিভক্তির কারণে এ সুযোগ আমরা হারিয়েছি। জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনের এ সুবর্ণ সুযোগ সবাই মিলে আমাদের নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে কাজে লাগাতে হবে। এ সুযোগ ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।

উপাচার্য আরও বলেন, চবি ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসকে সমৃদ্ধ একটি ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়তে চবি প্রশাসন কাজ করছে। এ লক্ষ্যে চবি ক্যাম্পাসেই ‘ওশানো স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন’ স্থাপনের বিষয়ে চীনের সাথে চবির ইতোমধ্যেই সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে। মাননীয় উপাচার্য ইনস্টিটিউটের অবকাঠামোসহ সার্বিক উন্নয়নে চবি ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের এলামনাইদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। পরে উপাচার্য চবি ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের ৫০ বছর পূর্তি সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সকলকে সাথে নিয়ে কেক কাটেন এবং বেলুন, ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন।

উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান স্বাধীনতা-পরবর্তী চবি ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস প্রতিষ্ঠাকালে সম্পৃক্ত প্রতিতযশা শিক্ষকদের স্মরণ করে বলেন, আগামী ২০৫০ সালে পৃথিবীর মানুষ খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য ৩০ শতাংশ সমুদ্রের ওপর নির্ভর করবে। এজন্য প্রাকৃতিক বিশাল জলরাশি ও সমুদ্রগুলোকে আমাদের কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে হবে। উপ-উপাচার্য ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-গবেষক ও শিক্ষার্থীদের দেশের সমুদ্র সম্পদ আহরণে কাজ করার আহ্বান জানান।

উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মোঃ কামাল উদ্দিন উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় তথা প্রতিটি বিভাগ/ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ব্যবস্থাকে উচ্চতর অবস্থায় নিয়ে যেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাইদের এগিয়ে আসতে হবে। সামুদ্রিক সম্পদকে জাতির কল্যাণে কাজে লাগাতে উপ-উপাচার্য শিক্ষক-গবেষকদের কাজ করার আহ্বান জানান এবং এ ইনস্টিটিউটকে আরও সমৃদ্ধ করে দেশ-জাতির কল্যাণে কাজ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি এলামনাইদের সহযোগিতা কামনা করেন।

চবি মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, এ ইনস্টিটিউটকে আগামীতে দেশের একটি সমৃদ্ধ ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়তে চাই। ব্লু-ইকোনমি বাস্তবায়ন ও জাতির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ ইনস্টিটিউট অবদান রাখতে কাজ করছে।

৫০ বছর পূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক চবি ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের পরিচালক প্রফেসর ড. শেখ আফতাব উদ্দিন বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের শিক্ষক-গবেষকদের নতুন নতুন গবেষণার মাধ্যমে সমুদ্রে বিরাজমান অপার সম্ভাবনাময় সম্পদ দেশ-জাতির কল্যাণে কাজে লাগাতে চাই।

সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে চবির বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ, চবি ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের এলামনাই ও তাঁদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে আইএমএস গোল্ডেন জুবিলী সমাবেশ, অভ্যর্থনা এবং নিবন্ধন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, বক্তৃতা, প্রাক্তনদের মতবিনিময়, মধ্যাহ্নভোজন, প্রার্থনা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, রিফ্রেশমেন্ট, সম্মাননা ও পুরস্কার প্রদান অধিবেশন, র‍্যাফেল ড্র, বাদ্যযন্ত্র ও রাতের খাবার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহীদদের সম্মানে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। অনুষ্ঠানে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয় এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অতনু সিংহ ও তাহসিনুল জান্নাত আফিফা।

এনইউ/জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর