সন্দ্বীপ-কুমিরা নৌরুটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় (বিআইডব্লিউটিএ) ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের (চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ) দুই যুগ ধরে চলা বিরোধের অবসান হতে যাচ্ছে। বুধবার থেকে এ রুটে মালামাল পরিবহন ও যাত্রী পারাপার স্থগিত রাখতে নিয়োজিত ইজারাদারকে নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ। পরিষদের কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা (এক্সিকিউটিভ অফিসার) দিদারুল আলম এমনটাই জানিয়েছেন।
জানা যায়, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ ঘাটে বিআইডব্লিউটিএর নিয়ন্ত্রণে স্টিমার সার্ভিস চলমান ছিল। পাশাপাশি এ সময় একই ঘাটে মালামাল পরিবহন (গোদি ঘাট) করত চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ। স্টিমারে ওঠানামার অসুবিধার কারণে যাত্রীদের বরাবরই সার্ভিসটির প্রতি ছিল অসন্তোষ। এ ব্যর্থতার সুযোগে ২০০১ সাল থেকে জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে গোদি ঘাটে বিভিন্ন নৌযানে ও স্পিড বোটে শুরু হয় যাত্রী পরিবহন। এটি অবৈধ দাবি করে বিআইডব্লিউটিএ চট্টগ্রাম জেলা পরিষদকে তা বন্ধ করতে নির্দেশ দিলে উভয়ের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব, এক পর্যায়ে তা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা-মোকাদ্দমাও হয়।
দুই যুগ ধরে চলা এই বিরোধ সংশ্লিষ্ট এমপি-মন্ত্রী ও আন্ত:মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায়ও সমাধান হয়নি। ফলে এর মাশুল দিতে হয়েছে এ রুটে যাতায়াতকারী চার লাখ মানুষকে। গত আগস্টে পটপরিবর্তনের পর বিদ্যুৎ, সড়ক ও রেলপথের দায়িত্বে নিয়োজিত বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা সন্দ্বীপের সন্তান ড. ফাওজুল কবির খাঁন ঘাট এলাকা পরিদর্শন করে দ্বীপবাসীর যাত্রী পারাপার সুবিধার উন্নতির উদ্যোগ নেন।
বিগত ১০ ডিসেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সন্দ্বীপকে উপকূলীয় নদীবন্দর ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে সীমানা উল্লেখ করে এখানে অন্যান্য সংস্থার সকল প্রকার কর্তৃত্ব বাতিল করা হয়। এদিকে যাত্রীপরিবহনে বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি গত সপ্তাহে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে স্পিড বোটে যাত্রী পরিবহনে অনুমোদন প্রদান করে। কিন্তু অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো যাত্রীসেবার উদ্যোগ নিলে তাদেরকে কুমিরা ঘাটে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠে। এ সব বিষয়ে পত্র-পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সিইও সাব্বির ইকবাল ঘাট পরিচালনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্ত নয়; মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্তেরও প্রয়োজন রয়েছে বলে দাবি করেন। তাঁর এ বক্তব্যে সন্দ্বীপ কেন্দ্রিক সামাজিক মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠে। পরদিন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জেলা পরিষদের সচিবের (সিইও) একটি বদলির আদেশ জারি হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের এক্সিউটিভ অফিসার দিদারুল আলম মোবাইলে প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপাতত: কোনো প্রকার পরিবহন না করতে নিয়োজিত ইজারাদারকে নিষেধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে এর চেয়ে বেশি কিছু আমি বলব না।আমাদের সিইও এখনও বিমুক্ত হননি। তিনি এলে তাঁর সাথে কথা বলুন।’
বিআইডব্লিউটিএর বন্দর কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘এ ঘাটে জেলা পরিষদের কোনো অধিকার নেই, আমাদের নিয়োজিত ইজারাদার অনুমোদিত নৌযান দিয়ে পারাপার করছেন।’
এনইউ/জই