শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গবেষকদের মধ্যে বিপুল সাড়া জাগিয়ে শেষ হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ আয়োজিত দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন। জ্ঞান বিতরণের পাশাপাশি জ্ঞান সৃজনে মার্কেটিং বিভাগের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে আয়োজিত এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যুক্তরাস্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, গণচীন, ভারত ও বাংলাদেশের ৭৫ (পঁচাত্তর) জন গবেষক তাঁদের মৌলিক গবেষণাকর্ম উপস্থাপন করেন।
তাঁরা এই সম্মেলনের মূল থিম “Sustainable Business Transformation: Challenges and Opportunities for Marketing”-এর উপর নির্ধারিত ১৫ (পনের) টি ট্র্যাকে তাদের গবেষণালদ্ধ ফলাফল প্রকাশ করেছেন ।
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের চারটি ভেন্যুতে সবগুলো বিজনেস সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্লেনারি সেশন অনুষদের লেকচার গ্যালারিতে ৮ জানুয়ারি সকাল ৯:৩০এ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর এস. এম. নসরুল কদির উপস্থিত ছিলেন। কী-নোট স্পিকার হিসেবে এতে চারটি বিষয়ের উপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাপানের দশিশা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ফিলিপ সুুগাই, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম-এর প্রফেসর আতাউর বেলাল, ভিয়েতনাম ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ইকোনমিক্স এন্ড বিজনেস-এর হেড অব মার্কেটিং ড. দাও ক্যাম থুই ও সফল কর্পোরেট প্রতিনিধি র্যাংকন-এর সিইও তানভির শাহরিয়ার রিমন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সম্মেলন আয়োজক কমিটির কো-কনভেনর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী। মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. তুনাজ্জিনা সুলতানা আগত গবেষক ও অতিথিদের ধন্যবাদ জানান।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এ ধরনের সম্মেলন চবি ও দেশের ভাবমূর্তি বাড়াবে এবং বিশ্বের গবেষকদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রফিট চাইতে পারেন, তবে এর সঙ্গে দেশপ্রেম যোগ করা উচিত। তিনি আরও নতুন আইডিয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন এবং কক্সবাজারে জুস শিল্প গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন।
চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, টেকসই ব্যবসায়ের জন্য গবেষণা ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টির মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের প্রয়োজন এমন নীতিমালা তৈরি করা, যা ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানে কার্যকর হবে।
সম্মেলনে চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মোঃ কামাল উদ্দিন ক্রেতাদের আচরণগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে টেকসই ব্যবসায় গ্রিন ফুড ও গ্রিন এনভায়রনমেন্টের গুরুত্ব বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের এসব দিকে মনোযোগী হতে হবে।
চবি ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর এস. এম. নছরুল কদির তার বক্তব্যে কনফারেন্সের মূল থিম নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ সবকিছু মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু আমরা তা ধ্বংসের অধিকার রাখি না। পৃথিবী সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী বলেন, একাডেমিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বর্তমান যুগে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) চ্যালেঞ্জ হিসেবে আসছে, যা মোকাবিলায় নতুন কৌশল ও নীতি নির্ধারণ প্রয়োজন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, মার্কেটিং খাত এখন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, তাই বিপণন কৌশল নির্ধারণের জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা খুঁজে বের করা জরুরি।
সম্মেলনের মূল বক্তা আতাউর বেলাল টেকসই ব্যবসায় নিয়ে তার গবেষণাকর্ম তুলে ধরেন। বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এ সম্মেলন থেকে পাওয়া জ্ঞান ভবিষ্যতে দেশের ব্যবসায়িক নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
দু’দিনব্যাপী বিভিন্ন বিজনেস সেশনে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত কয়েকজন উপাচার্য ও মার্কেটিং ও ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ের প্রথিতযশা অধ্যাপকবৃন্দ সভাপতিত্ব করেন। প্রথমদিন ২৪টি ও দ্বিতীয় দিন ২১টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। প্রতিটি বিজনেস সেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপক ও নির্ধারিত আলোচকবৃন্দর পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক পেশাজীবি এক্সিকিউটিভ ও শিক্ষার্থী উপস্থিত থেকে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।
এ সম্মেলন মার্কেটিং বিষয়ের একাডেমিশিয়ান, এক্সিকিউটিভ, চিন্তক ও শিক্ষার্থীদের একটি বৃহৎ মিলনমেলায় পরিণত হয়। চিন্তার আদান-প্রদানের পাশাপাশি গবেষক-শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং-এর অভূতপূর্ব একটি সুযোগও এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন উন্মোচন করেছে। দু’দিন ব্যাপি এ সম্মেলন আগামীতে অনেক নতুন গবেষণা ও সৃজনশীল চিন্তার পথ দেখাবে বলে অংশগ্রহণকারীরা অভিমত ব্যক্ত করেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে অংশগ্রহণকারী গবেষক-চিন্তকদের সম্মানে কর্ণফুলী নদীতে রিভার-ক্রুজের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় নগরীর হোটেল ওয়েল পার্ক প্লেনারী ক্লোজিং সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার উপস্থিত থেকে সম্মেলনের বিভিন্ন ট্র্যাকের সেরা প্রবন্ধ ও সার্বিকভাবে পুরো সম্মেলনের সেরা প্রবন্ধকে পুরস্কার তুলে দেন। তাঁর বক্তব্যে তিনি মার্কেটিং বিভাগকে সফল ও ফলপ্রসূ একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের জন্য অভিনন্দন জানান।
চবি মার্কেটিং আন্তর্জাতিক সম্মেলন বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক বিপণন চিন্তায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখবে বলে ও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। সম্মেলনের কো-কনভেনর প্রফেসর ড. তৈয়ব চৌধুরী ও সদস্য-সচিব প্রফেসর ড. তুনাজ্জিনা সুলতানা তাঁদের বক্তব্যে সবাইকে ধন্যবাদ জানান ও এ ধরনের সম্মেলন আয়োজনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
এনইউ/জই