বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

গণহারে মিডিয়া অনুমোদন দেওয়ায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্ট হয়েছে : সংস্কার কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণমাধ্যম সংষ্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেছেন, ‌‌বাংলাদেশে চলার বাজার না থাকার পরও বিগত সরকার বিপুল পরিমাণ টিভির আনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া দেশে সংবাদপত্র রয়েছে প্রচুর। এগুলোর মধ্যে অনেক গণমাধ্যম চলছে নাম সর্বস্ব। ফলে এসব মিডিয়া বেতন দিতে না পারায় বিনা বেতনে কর্মী নিয়োগ দিয়ে কার্ডের ব্যবসায় চলে গেছে । ফলে গণমাধ্যমে একটি দুষ্টচক্র সৃষ্টি হয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এটাকে ‘ভেঙে’ নিয়ম শৃঙ্খলায় আনতে হবে।
গত রোববার চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। মতবিনিময় সভায় আলোচকরা এক ব্যক্তির নামে একাধিক পত্রিকার নিবন্ধন, পত্রিকার প্রচার সংখ্যার ‘অবিশ্বাস্য তথ্য’সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনপ্রধান কামাল আহমেদ বলেন, পত্রিকার প্রকাশনার বিষয়ে ‘নৈরাজ্যকর’ পরিস্থিতি হয়েছে। ‘শৃঙ্খলা আনা’ দরকার। তবে সেটা শুধু পত্রিকার ক্ষেত্রে না, টেলিভিশনের ক্ষেত্রেও হয়েছে।
কামাল আহমেদ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে’ ছিল। সংবাদমাধ্যমগুলো গত ১৫ বছরে কীভাবে ‘স্বৈরাচারী সরকারের’ হাতকে শক্তিশালী করেছে সেগুলোও মূল্যায়ন করা উচিত। সাংবাদিকরা দল ও লীগে বিভক্ত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পেশার জন্য রাজনৈতিক দলবাজি বন্ধ করা দরকার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৪৬টা টেলিভিশন চলার বাজার না থাকার পরও অনুমোদন দিয়েছে আগের সরকার। এটা কোনো ভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এসব টেলিভিশন বেতন দিতে না পারায় বিনা বেতনে কর্মী নিয়োগ দিয়ে কার্ডের ব্যবসায় চলে যায় বলে মন্তব্য করে তিনি।
আলোচকরা সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, প্রেস কাউন্সিলকে আরও সক্রিয় করা ও ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের প্রস্তাব তুলে ধরেন। এছাড়া পত্রিকার প্রচার সংখ্যার মিথ্যা তথ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। সাংবাদিকদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, “সাংবাদিকতার কোনো নীতিমালা নেই, কথাটি ঠিক না। সাংবাদিকতার অনেকগুলো নীতিমালা আছে। পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রে অনেক নীতিমালা থাকলেও সরকারের কর্মকর্তারা সেগুলো মানেননি। রাজনৈতিক প্রভাবে বা অন্য কোন কারণে তারা সেগুলো মানেনি।
আবার আমরা যদি বলি সম্পাদকীয় নীতিমালা নেই। সেটা সত্য কথা। সম্পাদকীয় নীতিমালা করার জন্য আমরা সম্পাদক পরিষদকে বলেছি। কারা সম্পাদক হতে পারবে, তাদের যোগ্যতা কী হবে এসব বিষয়ে আসলেই একটি জাতীয় নীতিমালা থাকা দরকার। আমরা আশা করছি, সম্পাদক পরিষদ সে উদ্যোগটি নেবে।
পত্রিকার প্রচার সংখ্যার বিষয়টি তুলে ধরে কমিশন প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, ঢাকায় দুটি সংবাদপত্র হকার্স সমিতির মাধ্যমে পত্রিকা বিলি হয়। এ দুই সমিতির কাছ থেকে হিসেব নিয়ে দেখেছেন তারা কতগুলো পত্রিকা বিক্রি করেন। হকার্স সমিতির হিসেব ভুল হওয়ার কারণ না নেই, এমন যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, “সে হিসেবের সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। ঢাকা শহরের ৩০২টি এবং সারা দেশে ৫৯০-৫৯২টি পত্রিকা মিডিয়া লিস্টের মধ্যে আছে। হকারদের হিসেবে আমরা দেখেছি মাত্র ৪৬টা পত্রিকা চালু আছে। বাকী পত্রিকা কেউ নেই না। এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।
কামাল আহমেদ বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবের একার নামে চারটি পত্রিকার ডিক্লারেশন আছে। তার মধ্যে একটি পত্রিকার সার্কুলেশন ছয় হাজারেরও কম, অথচ দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার। এটা লিখতে বাধ্য করা হয়েছে।পত্রিকার ডিক্লারেশনের বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক মালিকের একাধিক মিডিয়া রাখার বিধান নেই। কিন্তু আমাদের দেশে একটি হাউসকে একাধিক মিডিয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একটি থেকে একাধিক বাংলা-ইংরেজি পত্রিকা বের হচ্ছে বিভিন্ন নামে। যার কারণে কোন বৈচিত্র থাকছে না। আমাদের এ সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজতে হবে।
ওয়েজ বোর্ডের পাশাপাশি ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ একটি ভালো সমাধান হতে পারে মন্তব্য করে কামাল আহমেদ বলেন, যে শহরে খরচ বেশি বিশেষ করে রাজধানী, তাদের জন্য আলাদা একটা ভাতা এবং সারা দেশের জন্য নন্যুতম বেতন কাঠামো থাকা দরকার।
মতবিনিময় সভায় আলোচনা করেন- চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও বাসসের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান মো. শাহনেওয়াজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ওসমান গণি মনসুর, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন বাহারি, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের অন্তবর্তী কমিটির সদস্য সচিব ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন- গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, আখতার হোসেন খান, বেগম কামরুন্নেসা হাসান, আব্দুল্লাহ আলম মামুন, মোস্তফা সবুজ।
এনইউ/জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর