বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

চট্টগ্রামে মাঝির ঘাটে শ্রমিক সমাবেশ

ভিন্নরূপে ক্ষমতায় থাকার পায়চারি করবেন না : খসরু

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

ভিন্নরূপে মাঝখানে থেকে খেলাধুলা করে লাভ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর কোনো স্বৈরাচার থাকতে পারবে না। দেশে এখন গণতন্ত্রের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এগুলো ঠেকিয়ে আবার বহুরূপে, ভিন্নরূপে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকার পায়চারি করলে সেটা মেনে নেয়া হবে না।

তিনি সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকালে নগরীর মাঝির ঘাট স্ট্যান্ড রোডে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সদরঘাট থানা বিএনপির বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

সদরঘাট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপির সদস্য মো. সালাউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সদরঘাট থানা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম সম্রাটের পরিচালনায়  সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, মহানগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান।

নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করতে ষড়যন্ত্র চলবে না মন্তব্য করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগে থেকে বলে দিচ্ছি, বড় বড় স্বৈরাচারকে দেশের মানুষ তাড়িয়েছে। ওই প্রক্রিয়ায় ভিন্নরূপে বহুরূপের ভাব দিয়ে আর কোনো স্বৈরাচারকে থাকতে দিব না। নির্বাচন দিতে হবে, দেশের মানুষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। দেশের মানুষ বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম গত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। মহিলারা ভোট দিতে পারেনি। সবাই ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় আছে।

মাঝখানে কেউ এসে খেলাধুলা করে লাভ হবে না জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ভোট পিছিয়ে দিবেন, বিলম্বিত করবেন, ষড়যন্ত্র করে শেখ হাসিনা একভাবে স্বৈরাচার, আপনারাও এসব করে লাভবান হবেন না। তাই আগে থেকে জনগণের দেওয়ালের লিখন পড়তে শিখুন। শেখ হাসিনা পড়তে পারেন নাই। তাই থাকতেও পারেন নাই। তিনি বলেন, কিছু মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে দেশ কোন পথে যাবে, সেটা কি জনগণ গ্রহণ করবে? যত সংস্কার প্রয়োজন, তত সংস্কার দেশের সংসদে হবে ইনশাআল্লাহ। বিএনপির ৩১ দফার মধ্যে সব আছে। এর বাইরেও যদি সংস্কার থাকে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে সংস্কার করবো।

শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশ স্বৈরাচার ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করেছে। দেশ যেই কারণে ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করেছে, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রবর্তন করা। গণতান্ত্রিক উপায়ে বাংলাদেশে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংসদের যাবেন, সরকার গঠন করবেন। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল, সে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ছিল না, জবাবদিহি ছিল না। কারণ, সে অনির্বাচিত, দখলদার, স্বৈরাচার। বাংলাদেশে আমরা আর কোনোদিন কাউকে দখল করতে দিব না। অনেকে আন্দোলনকে হাইজেক করে স্বৈরাচার হতে চাচ্ছে।

সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, প্রতিনিয়ত সংস্কার হবে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে এমন কোনো বুদ্ধিমান মানুষ হয়নি, উনারা বসে সংস্কার করবেন। আর বাংলাদেশ প্রত্যেক বছর এ ধারায় চলবে। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, প্রতিনিয়ত সংস্কার হতে হবে।

আমীর খসরু বলেন, সংস্কারের দোহায় দিয়েন না, শুধু নির্বাচনের সংস্কার করেন। নির্বাচনী সংস্কার করে নির্বাচন দিয়ে জনগণের কাছে জনগণের মালিকানা ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়ে নির্বাচিত সংসদ সরকার আগামী দিনে যত সংস্কার সবগুলো করা হবে। জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় হবে না।

সরকার পতনের সময় শ্রমিকরা ভূমিকা রাখায় তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি। এসময় তিনি ষড়যন্ত্রকারী ও জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার চেষ্টাকারীদের বিষয়ে সজাগ থাকতে শ্রমিকদের আহ্বান জানান।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ছাত্র জনতার আন্দোলনে ঢাকা শহরের চারিদিক থেকে যখন মিছিল আসতো এই মিছিলের অগ্রভাগে ছিল শ্রমিকের মিছিল। এই মিছিল দেখেই শেখ হাসিনা লক্ষ্মণ সেনের মত পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সব সময় পালিয়ে যায়। ৭১ সালে শেখ মুজিব ও ওয়ান ইলেভেনের সময় শেখ হাসিনা পালিয়েছিল। আর ৭১ সালে শহীদ জিয়া ও ওয়ান ইলেভেনের সময় বেগম খালেদা জিয়া হাল ধরেছিল। ২৪ এর গণ আন্দোলনে হাল ধরেছে তারেক রহমান। আজকে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে একটি দুর্নীতি মুক্ত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ নতুন প্রজন্মকে উপহার দিতে পারব।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আবুল হাশেম বক্কর বলেন, চট্টগ্রামে গণ আন্দোলনের সময় নিউ মার্কেট মোড়ে শ্রমিকরা অগ্রভাগে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা যখন সমাবেশে হামলা করে তখন এই শ্রমিক ভাইয়েরা ছাত্র জনতার সাথে মিলে তাদেরকে প্রতিহত করেছিলেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এরশাদ উল্লাহ বলেন, শ্রমিকের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যই শহীদ জিয়া শ্রমিক দল গঠন করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া শ্রমিক সমাজের উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ করেছেন। আর বিগত সরকার শ্রমিকদের স্বার্থ ধ্বংস করেছে, লুটপাট করেছে, অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফায় শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে শ্রমিক সমাজের উন্নতি হবে।

নাজিমুর রহমান বলেন, শ্রমিকরা হচ্ছেন অর্থনীতির প্রাণ। তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। চট্টগ্রামে কোনো চাঁদাবাজি চলবে না। যারাই চাঁদাবাজির সাথে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এস এম সাইফুল, আব্দুল হালিম শাহ আলম, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু, আহবায়ক কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদীন জিয়া, মশিউল আলম স্বপন, বিভাগীয় শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল্লাহ বাহার। বক্তব্য রাখেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, জাসাসের আহবায়ক এম এ মুছা বাবলু, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম, মহানগর বিএনপি নেতা মো. আলী, ডবলমুরিং থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. সেকান্দর, সদরঘাট থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাউছার হোসেন বাবু, সি. সহ সভাপতি খোরশেদ আলম, মহিলাদল নেত্রী কামরুন্নাহার লিজা, মহানগর কৃষকদল নেতা আজম খান, ২৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি জামাল উদ্দিন জসিম, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া, ২৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, মহানগর শ্রমিক দল নেতা নজরুল ইসলাম মিয়াজী, মো. জুয়েল, মো. মনির, মো. আকতার, জামাল উদ্দিন, মো. নবী মো. রশিদ প্রমুখ।

এনইউ/জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর