চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে গত মঙ্গলবার পিটিয়ে ও কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। চট্টগ্রাম আদালত ভবনের কাছে কোতোয়ালী থানার পাশে সেবক কলোনির একটি বাসার সামনে রাস্তায় নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই হত্যাকাণ্ডের ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পুলিশের হাতে এসেছে।
সেখানে দেখা যায়, সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা একজন ব্যক্তি রাস্তায় পড়ে আছেন। আশপাশে ২৫-৩০ জন যুবক দাঁড়িয়ে রয়েছে। এদের মধ্যে এক যুবকের পরনে কমলা রঙের গেঞ্জি, কালো প্যান্ট এবং মাথায় ছাই রঙের হেলমেট। হেলমেটধারী যুবকটি হাতে থাকা কিরিচ দিয়ে পড়ে থাকা ব্যক্তিকে একের পর এক আঘাত করছেন। একই সঙ্গে আরও তিন-চারজন তাকে মারধর করছেন। কিরিচ হাতে আঘাতকারী যুবকের নাম চন্দন দাস, যিনি পেশায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
পুলিশ জানিয়েছে, আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যার ঘটনায় চন্দন দাসসহ ২৫ থেকে ৩০ জন জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে চারজন কুপিয়ে হত্যায় সরাসরি অংশ নেন। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ এ পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় তার অনুসারীরা বাধা দেন এবং প্রিজন ভ্যান আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও বিজিবি লাঠিচার্জ করে এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে।
এই পরিস্থিতি থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে আইনজীবীদের গাড়ি ভাঙচুর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের প্রতিবাদে কিছু আইনজীবী মিছিল বের করেন। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, মিছিল শেষে ফেরার পথে হোঁচট খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান সাইফুল ইসলাম। তখনই তাঁকে ঘিরে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
৫২ সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজ : পুলিশের সংগ্রহ করা ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপান ওম দাশ, চন্দন ও রনব। সাইফুলের নিথর দেহ রাস্তায় পড়ে থাকলেও লাঠিসোঁটা দিয়ে পেটাতে থাকেন অন্যরা। ঘটনাস্থলে আরও ২৫-৩০ জন উপস্থিত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে রমিত দাস, সুমিত দাস, গগন দাস, নয়ন দাস, বিশাল দাস, আমান দাস, মনু মেথর ও রাজীব ভট্টাচার্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের বেশির ভাগই পরিচ্ছন্নতাকর্মী আর একজন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।
এ ঘটনার পর থেকে সেবক কলোনির অধিকাংশ বাসিন্দা ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। গতকাল বিকেলে সেখানে কিছু মানুষকে দেখা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনার সঙ্গে কয়েকজন জড়িত থাকলেও পুরো কলোনি বিপদে পড়েছে। তারা দাবি করেন, নিরীহ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে ঘিরে আদালত প্রাঙ্গণের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী তারেক আজিজ বলেন, পুলিশ সর্বোচ্চ পেশাদারি ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। দায়িত্বে কারও গাফিলতি ছিল না।
সূত্র : ইত্তেফাক
এনইউ/জই