বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ইস্যুতে সংঘর্ষের ঘটনায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের এক আইনজীবীকে। মঙ্গলবার দুপুরে লালদিঘীর পাড় এলাকায় আদালতের মূল প্রবেশপথের বিপরীত সড়কে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত আইনজীবীর নাম সাইফুল ইসলাম আলিফ (৩৫)। তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি গ্রামের জনৈক জামাল উদ্দিনের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ এনামুল।
তিনি বলেন, ‘নিহত সাইফুল ইসলাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।’ অ্যাডভোকেট মোক্তার উদ্দিন সাগর নামে এক আইনজীবী বলেন, ‘সাইফুল পায়ে হেঁটে আদালত ভবনের মূল প্রবেশপথ দিয়ে বের হয়ে সড়কের অপরপাশে সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের লোকজন তাকে টেনেহিঁচড়ে রঙ্গম সিনেমা হলের সামনে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে।’
এদিকে আইনজীবী হত্যার ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি আগামীকাল (বুধবার) আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের একজন সহকর্মীকে ইসকনের সন্ত্রাসীরা নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আমরা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আগামীকাল (বুধবার) সারাদিন আদালত বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। সর্বস্তরের আইনজীবীদের এ প্রতিবাদে শামিল হওয়ার জন্য আমরা অনুরোধ করছি।’
এর আগে দুপুর ১২টা নাগাদ চিন্ময় ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। তবে তাকে বহন করা প্রিজন ভ্যান প্রায় ৩ ঘণ্টা আটকে রাখে ভক্ত সমর্থকরা। মহানগর আদালত ভবনের সামনে এ বিক্ষোভে তাদের সঙ্গে শামিল হয়েছেন আইনজীবীরাও। এ সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ বলেন, আদালতের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে আমরা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মিস মামলা করেছি।’
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে পুলিশ-বিজিবি-এপিবিএন সদস্যদের পাহারায় আদালত ভবন থেকে নামিয়ে নিচে রাখা প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এসময় প্রিজন ভ্যান থেকে সমবেতদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। তিনি বলেন, ‘৮ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালাবেন। আবেগকে শক্তিতে পরিণত করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবেন। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতাকে প্রাধান্য দেবেন- এটা আশা করছি। রাষ্ট্র অস্থিতিশীল হয় বা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নষ্ট হয়- এমন কিছু করব না।’ এর আগে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালত।
আদালত লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস : চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে দুপুর ১২টার পরপরই আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তার অনুসারী এবং আইনজীবীদের একাংশ। বেলা ১২টা থেকেই শত শত নারী-পুরুষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে বহন করা প্রিজনভ্যান আটকে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা তারা প্রিজনভ্যান আটকে রাখার পর বিকেল ৩টার পর পুলিশ অ্যাকশনে যায়। বিক্ষোভরতদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে এবং লাঠিচার্জ শুরু করে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা একপর্যায়ে আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায়ও আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেন। এ সময় আইনজীবীদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ছত্রভঙ্গ হয়ে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ লালদিঘী এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। এতে পুরো এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
ভারতের বিবৃতি : চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার ও জামিন নাকচের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ভারত। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদকারী সংখ্যালঘুদের উপর হামলার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।
ভরত সরকার ছাড়াও চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর মুক্তি দাবি করেছে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। তারা চিন্ময়কে মুক্তি না দিলপ হলে সীমান্ত অবরোধ ও কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে বিক্ষোভের হুঁশিয়ারি দেয়।
এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণের ইস্যুতে আইনজীবী হত্যার ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে চট্টগ্রামে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৬ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে।মঙ্গলবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম।
এনইউ/জই