জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ হবে তারা সিদ্ধান্ত নিবে, সরকার সিদ্ধান্ত নিবে। এর বাইরে অনির্বাচিত কারো কোনো অধিকার নেই। জাতীয় ঐক্যমতের পরিপ্রেক্ষিতে যতটুকু সম্ভব সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জনগণ তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি দেখতে চায়। তাদের নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়। এ কারণেই ঐক্য ঘটানো হয়েছে।
ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর ‘সিপাহী-জনতার বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে শনিবার চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত র্যালি পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিকেল ৩টায় নগরীর আলমাস সিনেমা হলের সামনে এই সমাবেশ করে বিএনপি। সেখানে চট্টগ্রাম নগর ও ১৫ উপজেলা থেকে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। সমাবেশ শেষে বিকেল বের করা হয় শোভাযাত্রা।
শোভাযাত্রাটি কাজির দেউড়ি, লাভ লেন, আমতলা হয়ে নিউমার্কেট মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এসময় বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে আমীর খসরু বলেন, তারেক রহমান বলেছেন, এ সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। আমরা এ সরকারকে আসা মাত্রই সমর্থন দিয়েছি, এ সরকারকে আমরা এখনো সমর্থন দিচ্ছি। আমরা চাই এ সরকার গণতন্ত্রের অধিকার ফিরিয়ে আনবে। আমাদের ঐক্য নষ্ট করা যাবে না। আওয়ামী লীগ উকি মারছে। তারেক রহমান যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন তা অটুট রাখতে হবে। অটুট রেখে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে যেতে হবে, নির্বাচনের দিকে যেতে, নির্বাচিত সরকারের দিকে যেতে হবে। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আপনাদের মনে আছে, চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ, বিভাগীয় শহরে সবকিছু উপেক্ষা করে জীবনের বিনিময়ে লাখ লাখ মানুষ আমাদের প্রত্যেকটি সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ঢাকাতে গুলি করে সমাবেশ পণ্ড করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। তারেক রহমানের নেতৃত্ব গুণের কারণে শেখ হাসিনার সেই আশা সফল হয়নি। তারেক রহমানের নেতৃত্বে সমস্ত দেশ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণে শেষ ধাক্কা যখন দিয়েছে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। যদি সেই পটভূমি সৃষ্টি না হতো, সেই অবস্থা সৃষ্টি না হতো তাহলে শেখ হাসিনাকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর সুযোগ ছিল না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পতনের গল্পের শেষ নেই, এখন অনেক গল্প শুনছি, প্রত্যেকদিন নতুন নতুন গল্প শুনছি। ওরা নাকি এটা করেছে, সেটা করেছে। এখন অনেকের অনেক গল্প শুনছি। তখন এরা কোথায় ছিল? ১৫ বছর যখন আমরা রাস্তায় আন্দোলন করেছি, জীবন দিয়েছি, গুম-হত্যার শিকার হয়েছি, বারবার জেলে গিয়েছি, তখন তো তোমাদের এসব গল্প শুনিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যে আন্দোলনের কারণে নিজেদের জীবনের বিনিময়ে আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে, চাকরি হারাতে হয়েছে, ব্যবসা হারাতে হয়েছে, পঙ্গু হতে হয়েছে, জেলে যেতে হয়েছে। তোমরা কয়জন? সব হিসাব করলে কিন্তু অসুবিধা আছে! আমরা কিন্তু হিসাব করতে চাচ্ছি না। আমরা চাচ্ছিলাম, সবাই মিলে শেখ হাসিনাকে বিদায় করে দিতে। দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক। গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশবাসী তাদের ভোটে যাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, সংসদে যাবে, সরকারে যাবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জবাবদিহি থাকবে। জবাবদিহিতাহীন কোনো সরকার বাংলাদেশের কল্যাণ করতে পারবে না।
তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিত্বহীন কোনো সরকার জনগণের কথা বুঝবে না, জনগণের কষ্ট বুঝবে না। কারণ বুঝতে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে, জনগণের পাশে থাকতে হবে, জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বুঝতে হবে। বিদ্যুতের বিল দিতে পারছে না, সেটা বুঝতে হবে; দু’বেলা খেতে পারছে না সেটা বুঝতে হবে। জনগণের সামর্থ্য ছাড়া কিছু ঠিকে থাকে না।
বিএনপি নেতা আমির খসরু বলেন, ২৩ তারিখে এক দফা, আগে তো এক দফা ছিল না। কেন এক দফা জানেন? আমরা বলেছি, এক দফার মাধ্যমে শেখ হাসিনার যদি পতন না হয় তাহলে আপনারা যত দফা দিবেন কোনো দফা কাজে আসবে না। তারপর আপনারা এক দফায় আসছেন; আমরা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। এটাই সত্য, এটা বুঝুন।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরো বলেন, ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার সহযোগতিায় সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিলেন। বাংলাদেশে এক নতুন ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে ৭ নভেম্বর। শেখ মুজিবুর রহমান, বাকশাল, আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তির স্বাদ পেয়েছে।
এসময় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম আকবর খোন্দকার, মহানগর বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করসহ বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এনইউ/জই