চট্টগ্রামে হাজারী গলিতে যৌথ বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৮২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান উপ-কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) মো. রইছ উদ্দিন।
এর আগে দুপুরে নগরের দামপাড়ায় সেনাবাহিনীর ৩৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সদর দপ্তরে যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে পৃথক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
উপ-কমিশনার মো. রইছ উদ্দিন বলেন, ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার দেওয়াকে কেন্দ্র হাজারী গলির মিয়া শপিং কমপ্লেক্সের মোল্লা স্টোরের মালিক মো.ওসমানকে অবরুদ্ধ করে কিছু মানুষ।
জরুরি সেবার প্লাটফর্ম ৯৯৯-এ ফোনকল পেয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরিস্থিতির অবনতি হলে যৌথ বাহিনীর সদস্যরাও ঘটনাস্থলে যান। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থল থেকে ওসমানকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার সময় উচ্ছৃঙ্খল দুর্বৃত্তরা তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ইটপাটকেল ও অ্যাসিড নিক্ষেপ করে। এতে সেনাবাহিনীর পাঁচজন ও পুলিশের নয়জন সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশের এক সদস্য অ্যাসিড দগ্ধ হয়ে বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, যারা এ ঘটনায় জড়িত ছিল, তারা ‘জয় শ্রীরাম’ বলে শ্লোগান দিয়েছপন। এছাড়া ফেসবুকে যে ধরনের প্রচার-প্রচারণা, গোয়েন্দা তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করে আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি, ইসকন সমর্থকরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। পোস্ট শেয়ার করা ওসমান আলী পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
হাজারী লেনের দোকানপাট বন্ধ রাখা সম্পর্কে পুলিশের কর্মকর্তা মো. রইছ উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামকে শান্তি-শৃঙ্খলার নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এই শান্তি শৃঙ্খলার পথে যারা বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে, যারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে তারা কখনোই শুভবুদ্ধির পরিচয় দেয় না, এটা আমরা ধরে নিতে পারি। শান্তির পক্ষে, শৃঙ্খলার পক্ষে অবশ্যই আমাদের অগ্রযাত্রা থাকবে। নিরাপত্তার স্বার্থেই এখন দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে। সেখানকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যৌথ বাহিনীর টিম মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ৮২ জনকে আটক করা হয়েছে। কোতোয়ালী থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা হয়েছে, তাই পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। কার কতটুকু সংশ্লিষ্টতা আছে, তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
ঘটনার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক ও গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে কি-না তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এদিকে দামপাড়ায় সেনাবাহিনীর ৩৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডে যৌথ বাহিনী সংবাদ সম্মেলনে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে টাস্কফোর্সের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওসমান আলী নামক একজন ব্যক্তির ইসকন-বিরোধী ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে নগরের হাজারী লেনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং আনুমানিক ৫০০-৬০০ জন দুষ্কৃতকারী হাজারী লেনে ওসমান আলী ও তার ভাইকে হত্যা এবং দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়। স্থানীয় কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের ছয়টি টহল দল ওই এলাকায় পৌঁছায়। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় জানমাল রক্ষা এবং মব জাস্টিস রোধে যৌথ বাহিনী ওসমান আলী ও তার ভাইকে ওই এলাকা থেকে উদ্ধার করে।
‘উত্তেজিত জনতার সামনে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানে আশ্বস্ত করা সত্ত্বেও এক পর্যায়ে উগ্র বিশৃঙ্খলাকারী ব্যক্তিরা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। দুর্বৃত্তরা এ সময় যৌথ বাহিনীর ওপর অতর্কিতভাবে জুয়েলারির কাজে ব্যবহারের অ্যাসিড হামলা চালায়। ভারী ইটপাটকেলসহ ভাঙা কাচের বোতল ছুড়তে শুরু করে। এতে সেনাবাহিনীর পাঁচ সদস্যসহ ৩৭ পুলিশ সদস্য আহত হন। সেনাবাহিনীর পাঁচ সদস্যকে বর্তমানে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ, চট্টগ্রাম) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে দুর্বৃত্তরা ইট ছুড়ে সেনাবাহিনীর একটি পিকআপ ভ্যানের উইন্ডশিল্ড ভেঙে ফেলে। ’
লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ আরও বলেন, উদ্ধার অভিযানের পর দুর্বৃত্ত শনাক্তকরণে যৌথ বাহিনীর ১০টি টহল দল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাজারী লেন এলাকায় গেলে লুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতকারী ব্যক্তিরা পুনরায় যৌথ বাহিনীর ওপর অ্যাসিডসদৃশ বস্তু ছুড়তে শুরু করে।
এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৮০ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়। বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত দুষ্কৃতকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়া চলমান। আটক ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট থানায় প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদসহ যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতে হস্তান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং হাজারী গলিসহ নগরের অন্যান্য এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে মেজর মোহাম্মদ রিজওয়ানুর রহমান, নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ, র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক মো. সাইফুল্লাহ, বিজিবি ব্যাটালিয়ন-৮ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মফিজুল ইসলাম ও আনসার কমান্ড্যান্ট ব্যাটালিয়ন চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক পারভীন সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।
এনইউ/জই