কখনো ভাত খাইয়ে,কখনো গান গেয়ে পিটিয়ে মারার এক নতুন মৃত্য উল্লাস চলছে এখন। কেন এ সব ঘটনা, উল্লাস সাধারণের অজানা। চট্টগ্রামে সম্প্রতিএক যুবক যুবক শাহাদাতকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি আগের ঘটনাগুলোর মতোই।
গত ১৪ অগাস্ট শাহাদাতের লাশের সন্ধান মেলে শহরের বদনা শাহর মাজারের সামনে থেকে। লাশের মাথা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল।
এক মাস ৬ দিন পর ২১ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক যুবককে বেঁধে পেটানোর ২০ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল হলে পরিচয় মেলে এটি শাহাদাতের। কে এই শাহাদাত? তার স্ত্রী নয় জবাব পাওয়া গেল বড়বোনের কাছ থেকে।
শাহাদাতের স্ত্রী শারমিন আক্তারও বাপের বাড়িতে।তার বড় বোন হোসেনে আরা জানেন ঘটনা সম্পর্কে। তার সাথ কথা বলে জানা যায়, গান গেয়ে পিটিয়ে মারা যুবক শাহাদাত তার ভাই।
শাহাদাতকে বছর দুয়েক আগে শারমিন নিজের পছন্দে বিয়ে করেন। বিআরটিসি বাস কাউন্টার সংলগ্ন বয়লার কলোনিতে শাহাদাত তার মা ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন।নির্দিষ্ট কোন পেশা ছিলনা তার।যখন যে কাজ জুটত তা করত।তাকে কেন মারা হলো,কেন টার্গেট করা হলো তা এখনে ক্লু হীন।৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর ঘটে যাওয়া আরো কিছু ঘটনার মতই এটি।নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা।বিশ্লেষকদের মতে এরকম প্রাণ সংহারের মধ্য দিয়ে কোন মহল ব্লেম গেমে লাভবান হতে চাইছে পরিবর্তিত পরিস্হিতিতে।
জানা গেছে ১৩ অগাস্ট সন্ধ্যা ৬টার দিকে শাহাদাতের পরিচিত সাগর নামে এক যুবক ফোন করে ‘কথা আছে’ বলে বাসা থেকে বের হতে বলেন। শাহাদাত টেলিফোনে বলার অনুরোধ করার পরও অপর প্রান্ত থেকে বাসা থেকে বের হওয়ার অনুরোধ করায় তিনি বের হয়েছিলেন।
বাসা থেকে বের হওয়ার পর শাহাদাতের খোঁজ মিলছিল না। পরদিন সন্ধ্যায় ফেইসবুকে একটি লাশের ছবি দেখে সেটি শাহাদাতের বলে নিশ্চিত হয়ে হাসপাতালে যায় স্বজনরা। সেখান থেকে তাদের থানায় পাঠানো হয়।
রাতে থানা থেকে বের হয়ে আসার সময় এক যুবক তাদের পরিচয় জানতে চেয়েছিলে।ওই যুবক বলেছে, দুই নম্বর গেইট এলাকায় একটা ছেলেকে গণপিটুনি দেয়া হয়েছিল। আপনারা তার পরিবারের কেউ কিনা। তখন তারা ভয়ে পরিচয় না দিয়ে বলেছি পারিবারিক একটা ঝামেলার কারণে তারা থানায় এসেছে।
পরে জানা গেল,সাগর নামের যে যুবক টেলিফোনে শাহাদাতকে বাসা থেকে বের হতে বলেছিলেন পরে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। শাহাদাত তাকে (সাগর) পাঁচ হাজার টাকা ধার দিয়েছিল। সে টাকা ফেরৎ না দেয়ায় দুই জনের মধ্যে একটু ঝামেলাও হয়েছিল বলেও জানা যায়।
শাহাদাতকে পিটিয়ে মারার বিষয়টি আগে স্বজনরা জানত না। গত পরশু দিন (শনিবার) স্বজনদের থানায় ডেকে নিয়ে পুলিশ যখন ভিডিও দেখায়, তখন সেটি শাহাদাতকে মারধরের বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।
শাহাদাতের লাশ উদ্ধারের পর গত ১৫ অগাস্ট পাঁচলাইশ থানায় একটি অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদি তার চাচা মো. হারুন।
হারুন জানায় ১৪ অগাস্ট রাতে ফেইসবুকে শাহাদাতের লাশের ছবি দেখার পর তার মা, স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায়। সেখানে লাশঘরে শাহাদাতের লাশ ছিল।
পোস্ট মোর্টেমের লাশ হস্তান্তর করা হয়। চৈতন্য গলি নগর বাইশ মহল্লা কবরস্থানে শাহাদাতকে দাফন করা হয়।
১৩ অগাস্টের রাতে শাহাদাতকে যখন মারধর করা হয়, সেসময় থানায় পুলিশ থাকলেও তাদের তেমন সক্রিয় দেখা যায়নি।
এছাড়া সড়কে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। সেই সময়ে সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছিল শিক্ষার্থীরা।
১৪ অগাস্ট প্রবর্তক মোড়ের অদূরে সিএসসিআর হাসপাতালের বিপরীতে বদনা শাহ মাজারের সামনের সড়কে রাস্তায় শাহাদাত হোসেনের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন সেখানে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারী রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা।
তারাই প্রথমে লাশ নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। পরে পুলিশ খবর পেয়ে মেডিকেলে যায় ও পরবর্তী আইনি কাজ সারে।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ক্রাইম) রইছ উদ্দিন বলেন, “প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারণা ১৩ অগাস্ট রাতে ষোলশহর দুই নম্বর গেইটের আশপাশে শাহাদাতকে মারধর করা হয়। পরে তার লাশ বদনা শাহ মাজারের সামনের সড়কে ফেলে রাখা হয়।
শাহাদাতের স্বজনরাও জানত না, তাকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। মারধরের ভিডিও পেয়ে আমরাই তাদের ডেকে এনে মারধরের শিকার ব্যক্তি শাহাদাত বলে নিশ্চিত হন।
রইছ বলেন, অপরাধীদের ধরতে পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। যারা হামলায় জড়িত ছিল তাদের শনাক্তে ভিডিওটি নিয়ে কাজ করছে বিশেষ টিম।
কেন শাহাদাতকে মারা হয়েছে, পুলিশ সেটির উত্তর খুঁজছে জানিয়ে উপ কমিশনার রইছ উদ্দিন বলেন, “নিহত শাহাদাতের নির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিল না। কখনো তিনি রিকশা চালাতেন, কখনো বিআরটিসি এলাকার ফলমণ্ডিতে কাজ করতেন, যখন যা পেতেন তাই করতেন।”
শাহাদাতের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা এবং কারো সাথে কোন বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে কিনা সব বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানান উক্ত পুলিশ কর্মকর্তা।
এমএ/ জই