চট্টগ্রামে শিক্ষার্থী নিপীড়নের অভিযোগে মামলার আবেদনে ২৮ জন সাংবাদিককেও আসামি করায় ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ করে তা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে সাংবাদিকদের আটটি সংগঠন।
বৃহস্পতিবার এক যুক্ত বিবৃতিতে সাংবাদিকের বিরূদ্ধে ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ মামলার আবেদনকে ‘স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের অংশ’ বলে আখ্যায়িত করেন সংগঠনগুলোর নেতারা।
বুধবার চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম জুয়েল দেবের আদালতে আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রীসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আদালতে একটি মামলার আবেদন করেন এক নারী। তাতে যাদের তিনি আসামি করেছেন, তাদের ২৮ জনই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মী।
মোট ১০ ধরনের অভিযোগ করেছেন বাদী, যার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের অপহরণ-নির্যাতনের মত অভিযোগও রয়েছে।
বুধবার শুনানি শেষে বিচারক ওই অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী হাসিনা মমতাজ (৫৫) নগরীর কোতোয়ালি থানার নজির আহমদ চৌধুরী রোড বাইলেইন চেয়ারম্যান গলির বাসিন্দা সৈয়দ আবুল হাসেমের মেয়ে। সৈয়দ আবুল হাসেম চট্টগ্রাম নগর বিএনপির নেতা ছিলেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা।
এই মামলার আবেদনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি, চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম এবং টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন।
বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, “এ মামলা পেশাদার সাংবাদিকদের বিরূদ্ধে স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের অংশ। অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানাই।
“এর পেছনে স্বার্থান্বেষী মহলের দূরভিসন্ধি ও হীন উদ্দেশ্য রয়েছে। সাজানো এ মামলা সাংবাদিকদের সামাজিকভাবে অপদস্ত ও হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টার অংশ।”
চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ সব সময় যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে দাবি করে সাংবাদিক নেতারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঠিক চিত্র দেশবাসীর কাছে তুলে ধরেছেন এই সাংবাদিকরাই।
“রক্তস্নাত একটি আন্দোলনের পর দেশের মানুষ যেখানে একটি নতুন বাংলাদেশ এর স্বপ্ন দেখছে, সেখানে মিথ্যা ও উদ্ভট নানা অভিযোগ এনে সাংবাদিকদের মামলার আসামি করার ঘটনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসলকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে।”
অবিলম্বে এ ধরনের সাজানো মামলা থেকে সাংবাদিকদের নাম প্রত্যাহার এবং ষড়যন্ত্রকারী মহলকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়ে নেতারা বলেন, “অন্যথায় সাংবাদিক সংগঠনগুলো এ ব্যাপারে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।”
বিবৃতিতের সই করেছেন বিএফইউজের সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা ও সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসিন কাজী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির সভাপতি খোরশেদ আলম ও সম্পাদক যীশু রায় চৌধুরী, চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির উদ্দিন তোতা ও সাধারণ সম্পাদক লতিফা আনসারী রুনা।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাশেদ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক রাজেশ চক্রবর্তী, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম-এর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলতাফ, টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিক আহমেদ সাজিব ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম মামুনের সই রয়েছে বিবৃতিতে।
এমএ/ জই