বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের নায়ক ওসি প্রদীপ গং এর বিরুদ্ধে চন্দনাইশের প্রবাসী সহ আপন সহোদর জোড়া খুন এর মামলা চার বছরেও কোন অগ্রগতি নেই।
এ ব্যাপারে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন বিএইচআরএফ এর আইনী সহায়তায় ভাই হত্যাকারীর শাস্তি চেয়ে বাদী রিনাত সূলতানার আবেদন দীর্ঘ শুনানী শেষে আদালত এস পি কক্সবাজারের মাধ্যমে টেকনাফ থানার মামলা নং ৭৯, তারিখ:-১৭/০৭/২০২০ এর রিপোর্ট তলব করেছেন চট্টগ্রামের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-০১, বেগম মোমিনুন্নিছার আদালত।
মামলায় বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন মানবাধিকার এডভোকেট যথাক্রমে- এড জিয়া হাবীব আহসান, এড. জসিম উদ্দিন,এড. হাসান আলী,এড. বদরুল হাসান,এড,খুশনুদ রাইসা,এড জিয়াউদ্দিন আরমান, এড শান্তনু চৌধুরী প্রমূখ।
দীর্ঘ চার বছর ধরে সংশ্লিষ্ট আদালতে বারবার মালার তারিখ নির্ধারণ ও রিপোর্ট তলবের আবেদন করেও শুনানী শেষে তদানিন্তন আদালত আদেশ দানে ব্যর্থ হন। বাহরাইন ফেরত প্রবাসী ও পেয়ারা ব্যবসায়ী ভাতৃদ্বয়কে চন্দনাইশ পুলিশের সহায়তায় ০৮ লক্ষ টাকা চাঁদার দাবীতে চন্দনাইশ থেকে তুলে নিয়ে টেকনাফে কথিত বন্দুক যুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়।
উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনা ধামাচাপা দিতে হত্যার পর তাদের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মিথ্যা মাদক মামলা দায়ের করা হয় যাহার মামলা নম্বর-৭৯, তারিখ:-১৭/০৭/২০২০।
মামলার বাদী রিনাত সুলতানা আপন সহোদর ২ ভাইয়ের হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিচার চেয়ে বিজ্ঞ আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নম্বর সি.আর ১৩৭/২০।
উক্ত মামলাটি দীর্ঘদিন স্থবির হয়ে থাকায় মামলার কার্যক্রম আরম্ব করা এবং ভিকটিমদ্বয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মাদক মামলা নম্বর-৭৯ এর প্রতিবেদন তলবের আবেদন করা হলে বাদীর আবেদন শুনানী শেষে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত- ০১ উক্ত মামলার অগ্রগতি রিপোর্ট তলব করেন এবং এই ব্যাপারে পুলিশ সুপার, কক্সবাজার কে নির্দেশ দেন।
ইতিপূর্বে বাদীর মামলায় আদালতের আদেশ মতে পুলশি সুপার আনোয়ারা র্সাকলে বিগত ৩০/০৯/২০২০ইং এবং ১৩/১০/২০২০ইং তারিখে এসপি কক্সবাজার সার্কেল আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে উল্লেখ্য করেন,’অত্র মামলার বাদিনী বা বাদিনীর পরিবারের সদস্যরা মামলায় বর্ণিত ভিকটিম আজাদুল ইসলাম আজাদ’কে এবং বাদিনীর বড় ভাই আমানুল ইসলাম ফারুককে অপহরণ ও চাঁদা দাবীর মাধ্যমে হত্যার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট এলাকার কোন থানায় কোন প্রকার নিয়মিত মামলা বা জিডি করেন নাই ।
এদিকে আজ আদালতে মামলাটি শুনানীর জন্য উত্থাপিত হলে বাদী পক্ষে মানবাধিকার আইনবিদ জিয়া হাবীব আহ্সান বলেন, যেহেতু তদন্ত প্রতিবেদনে ইতিপূর্বে নিহত ভাতৃদ্বয়ের অপহরণ ও হত্যার বিষয়ে কোন নিয়মিত মামলা দায়ের হয়নি, সেহেতু সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বাদীর আনীত অভিযোগ আমলে নিতে আইনে কোন বাধা নিষেধ নেই ।
তদন্ত প্রতিবেদনে কথা পরিস্কার হয়েছে যে, ভিকটিম আজাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা ছিল না এবং ফারুককে টেকনাফ থানায় যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় ঐ মামলায় তিনি আসামী ছিল না । চন্দনাইশ পুলিশের সহায়তায় গ্রেপ্তারকৃত ভাতৃদ্বয় পুলিশ হেফাজতে থাকাকালে টেকনাফে কথিত বন্দুক যুদ্ধে কিভাবে অংশ নিলো তাদের হাতে ২টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১১ রাউন্ড কার্তুজ ও ২০ হাজার পিস ইয়াবা কোথা থেকে এলো ? মানবাধিকার আইনজীবীরা আদালতে আরো প্রশ্ন তুলেন যে, পেটে বুকে ৩টি করে বুলেট বিদ্ধ হয় ? শরীরের অন্য কোথাও গুলিবিদ্ধ হয়নি । শরীরে ইলেক্টিক শক সহ নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায় । আহত অবস্থায় ভিকটিমদের কক্সবাজার সদর থানায় ভর্তির কথা বলা হলেও সেখানে ভর্তির কোন প্রমাণ মিলেনি, তাদের লাশ সরাসরি মর্গে পাওয়া যায় । এজন্যে চাঁদা দাবীর মোবাইল কজ লিস্ট, লোকেশন, সিসিটিভি ফুটেজ সহ অন্যান্য ডিজিটাল ইভিড্যান্স ও চাক্ষুস সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহে শক্তিশালী তদন্ত দরকার।
আদালতের বিবেচনার স্বার্থে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ডিজিটাল ইভিডেন্সসহ একটি সরেজমিনে তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন ও বিজ্ঞ আদালতে ইতিপূর্বে দাখিল করা হয় । প্রতিবেদনে চন্দনাইশ থানার দালাল ও সোর্স সহ ৭ জন আর টেকনাফ থানার তদানিন্তন ওসি সহ ৫ পুলিশ আসামী সহ সংশ্লিষ্ট আরো কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সম্পৃক্ততার সাক্ষ্য প্রমাণ দাখিল করা হয়েছিল।
বিজ্ঞ আদালত দরখাস্ত শুনানী শেষে অভিযোগটি শুনানীর সূবিধার্থে টেকনাফ থানায় দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা নম্বর-৭৯ এর অগ্রগতি রিপোর্ট তলব করেন। মামলার বাদী নিহত ভাতৃদ্বয়ের আপন বোন একটি বেসরকারী হাসপাতালে কর্মরত নার্স মিস রিনাত সুলতানা শাহীন (৩১) পক্ষে অদ্য মামলা পরিচালনাকারী মানবাধিকার আইনজীবীগণ যথাক্রমে এডভোকেট এ এম জিয়া হাবীব আহসান, সৈয়দ মোহাম্মদ হারুন, এডভোকেট এএইচএম জসীম উদ্দিন, এডভোকেট মোঃ সাইফুদ্দিন খালেদ, এডভোকেট মোঃ হাসান আলী, এডভোকেট বদরুল হাসান, এড জিয়াউদ্দিন আরমান, এড শান্তনু চৌধুরী প্রমুখ শুনানীতে উপস্থিত ছিলেন ।
আইনজীবীরা আশা প্রকাশ করে বলেন, অতি শীঘ্রই কক্সবাজারের এসপি বিজ্ঞ আদালতের আদেশ মতে উক্ত টেকনাফ থানার মামলা নম্বর-৭৯ এর রিপোর্ট আদালতে দাখিল করবেন এবং মামলার নিয়মিত কার্যক্রম আরম্ভ হবে এবং অভিযুক্তরা যথাযথ শাস্তির আওতায় আসবে। উল্লেখ্য গত ০২/০৯/২০ ইং তারিখ মামলার বাদী রিনাত সুলতানা শাহীন মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন-এর আইনি সহায়তায় টেকনাফ থানা পুলিশের ৫ জন ও চন্দনাইশ থানা পুলিশের সোর্স সহ ৭ জন সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের আসামী করে চাঁদার দাবীতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন ।
ইতিমধ্যে মানবাধিকার সংগঠন বিএইচআরএফ এর একটি তথ্যানুসন্ধান টিম ঘটনাস্থলে প্যারালাল ইনভেস্টিগেশান করেন । প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের জবানবন্দী রেকর্ড করেন ।
মানবাধিকার আইনজীবীরা আদালতে ভিকটিমদ্বয়কে চন্দনাইশ থেকে চাঁদার দাবীতে অপহরণ ও ঠান্ডা মাথায় খুনের বিভিন্ন প্রমাণ তুলে ধরেন । মামালার শুনানি কালে আদালতের ভেতরে এবং বাহিরে বিপুল সংখ্যক মানবাধিকার ও মিডিয়া কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন ।
প্রেস রিলিজ