মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এস আলমের ১ লাখ কোটি টাকা পাচারের অনুসন্ধান শুরু, গাড়ি সরানো নিয়ে ধূম্রজাল

বিশেষ প্রতিনিধি

এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল ইসলাম (এস আলম) ও তাঁর সহযোগী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। পুলিরশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এই তদন্ত শুরু করেছে।

এদিকে অর্থে সরানোর অনুসন্ধান শুরু হলেও মইজ্জারটেকের ফ্যাক্টরি থেকে ১৪টি দামি গাড়ি কে বা কারা সরালো অভিযুক্তদের অস্বীকারের মধ্য দিয়ে এ নিয়ে এক ধরণের ধোঁয়াশাই তৈরি হলো। কেউ মনে করছেন অভিযুক্ত এনাম ও সহযোগীরা এসআলমের দুর্দিনের সহযোগী হয়েছেন।

গাড়িগুলো নিরাপদে সরিয়ে রাখার তারাই বিশ্বস্ত সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছেন।

যদিও শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনায় এনামের সম্পৃক্তার কথা অস্বীকার করে বলা হয়েছে এটা তাকে ফাঁসানোর চক্রান্ত।

এদিকে, সংবাদমাধ্যমে পাঠানো সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের মালিক এস আলম ও তাঁর সহযোগী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ অপরাধ, প্রতারণা, জালিয়াতি ও হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে।

এস আলমসহ তাঁর সহযোগী ব্যক্তিরা ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারে জড়িত সন্দেহে অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

সিআইডি বলছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে এস আলমসহ সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে একদিনের ব্যবধানে আবার বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের (পিআর) অনুমতি গ্রহণ করেছেন। তাঁরা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাস ও ইউরোপে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে নিজের ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ করেছেন।

সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, এস আলমের পাচার করা অর্থে সিঙ্গাপুরে ২ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধিত মূলধনের ক্যানালি লজিস্টিক প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান করেছেন এস আলম ও তাঁর সহযোগী ব্যক্তিরা।

তাঁরা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিদেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও বিনিয়োগের নামে ছয়টি ব্যাংক থেকে ৯৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান খুলে এস আলম অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১৮ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে।

সিআইডি বলছে, এস আলম, তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলমসহ তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং অপরাধ করেছেন তাঁরা।

গাড়ি সরানোর বিষয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ জেলা বিএনপি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

শনিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে সংগঠনটির দলীয় কার্যালয় দোস্ত বিল্ডিংয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাতে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন মইজ্জার টেক এলাকায় এস আলম গ্রুপের ওয়্যার হাউজে গিয়ে এনামুল হক এনামের তত্ত্বাবধানে এস আলম গ্রুপের বেশকিছু গাড়ি নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতে সহযোগীতা করেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রচার প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট এবং সাজানো সংবাদ।

২৯ আগস্ট নগরের কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় মীর গ্রুপের প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোনে কে বা কারা চাঁদা দাবি করেন।

বিএনপি’র নাম দিয়ে টাকা দাবি করার অভিযোগ পেয়ে এনাম ও আমি (আবু সুফিয়ান) কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে যাই। বিএনপি’র দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করতেই আমরা সেখানে গিয়েছিলাম।

অথচ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে আমরা মইজ্জার টেক এলাকায় এস আলম গ্রুপের ওয়্যার হাউজে গিয়েছিলাম। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছাড়া কিছু নয়।
তিনি বলেন, কয়েকটি গণমাধ্যম হয়তো কারো কুপ্ররোচনায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এমন মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছে, আমাদের রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে। যা অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক ও ষড়যন্ত্রমূলক। তিন এমন “মিথ্যা ও বানোয়াট” সংবাদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুল ইসলাম হোসাইনী, এস এম মামুন মিয়া, লায়ন নাজমুল মোস্তফা আমিন, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, মোস্তাফিজুর রহমান, অ্যাডভোকেট ফৌজুল আমিন, মফজল আহমদ চৌধুরী, নূরুল ইসলাম সওদাগর, ভিপি মোজাম্মেল (আনোয়ারা), মেজবা উদ্দিন চৌধুরী, হাজী মোহাম্মদ রফিক, হাজী মো: ইসহাক চৌধুরী, মঈনুল আলম ছোটন, শফিকুল ইসলাম শফিক, বিএনপি নেতা মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, রেজাউল করিম নেছার, মাষ্টার মোহাম্মদ লোকমান, রেজাউল করিম রেজা, গাজী আবু তাহের, মোর্শেদুল শফি হিরু, সাইফুদ্দিন আহমেদ তৌহিদুল আলম, আবদুল মাবুদ, শামশুল আলম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহসিন, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রবিউল হোসেন রবি, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফিরোজ প্রমুখ।

এদিকে বিভিন্ন গনমাধ্যমের খবরে জানা গেছে এসআলমের গাড়ি সরানো কান্ডে দক্ষিণ জেলা বিএনপির অভিযুক্ত তিন নেতাকে শোকজ করা হয়েছে।

এমএ/ জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর