মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আমরাও চাই সম অধিকার নিয়ে থাকতে : জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পট পরিবর্তনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপসনালয়ে হামলার ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি জানিয়েছে জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ।

শনিবার নগরীর রহমতগঞ্জে শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।

সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন বলেন, “গত ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিকভাবে সনাতনী সম্প্রদায়ের উপর নির্বিচারে হামলা ও তাদের বাড়ি-ঘর, মঠ-মন্দির উপাসনালয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। অনেক স্থানে ভাংচুরের পাশাপাশি বাড়িঘর ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

“সনাতনী সম্প্রদায় এসব ঘটনায় উদ্বিগ্ন ও হতাশাগ্রস্ত। প্রাণ রক্ষায় অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পরিষদের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা যাতে নিরাপদে বসবাস করতে পারে সে বিষয়ে নিশ্চয়তা আশা করেন প্রবীর কুমার সেন।

তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে অসম্মান ও জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। পরিষদ এসব অপরাধের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এসব কাজে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাচ্ছে।”

এই মুহূর্তে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ এক ‘ভীতিকর পরিবেশ-পরিস্থিতির মুখোমুখি’ জানিয়ে প্রবীর কুমার সেন বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বলেছেন, ‘এক দেশ এক পরিবার’।

আমরাও তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। আমরা এই স্বাধীন দেশে এক জাতি হিসেবে বেঁচে থাকতে চাই, সম অধিকার নিয়ে। ”

যে ১০ দফা তোলা হয়েছে, সেগুলো হলো, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্যমূলক সকল আইন ও অধিকার বিলুপ্ত করা, সংখ্যালঘু মন্ত্রণলায় গঠন, দুর্গা পূজায় তিনদিনের ছুটি এবং পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন।

এছাড়াও রয়েছে সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন ও দেবোত্তর সম্পতি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে নিহত সনাতনীদের আর্থিক অনুদান ও আহতদের সরকারি খরচে চিকিৎসা, সনাতনী সম্প্রদায়ের বাড়িঘর-দোকানপাট-মঠ মন্দিরে হামলা-লুটপাট-ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও দোষীদের বিচারের আওতায় এনে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করা এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সকল সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও হত্যার বিচার করা।

সম্মেলনে এক প্রশ্নে জবাবে প্রবীর কুমার সেন বলেন, “৯ অগাস্ট থেকে আমরা পরিষদের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা, ধর্ম উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছি। প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু উনি খুবই ব্যস্ত। আশা করি দেখা করতে পারব।

“ধর্ম উপদেষ্টার সাথে আমরা কথা বলেছি। চেষ্টা করছি উনাকে ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে জন্মাষ্টমী উৎসবে অতিথি করার। তবে অনেক জেলা এখন বন্যা দুর্গত। উনারা এখন ব্যস্ত।”

জন্মাষ্টমী উৎসেবর নিরাপত্তা নিয়ে পরিষদ নেতা আইনজীবী চন্দন তালুকদার বলেন, “নিরাপত্তা নিয়ে আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সাথে কথা বলেছি। আশা করি নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে জন্মাষ্টমী উদযাপন করতে পারব।”

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম তিথিতে গত ৪১ বছর ধরে জন্মাষ্টমী উৎসব পালন করে আসছে পরিষদ। এবারও পরিষদের উদ্যোগে চট্টগ্রামে সাড়ম্বরে উৎসব পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রবীর কুমার সেন বলেন, সোমবার সকাল ১০টায় জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা শুরু হবে। সেদিন বিকেল চারটায় ধর্ম সম্মেলন এবং রাত ১০টায় জন্মাষ্টমী উৎসবের অধিবাস ও জন্মাষ্টমী পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিষদ নেতা তপন কান্তি দাশ, বিশল কান্তু দে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী, পন্ডিত গদাধর দাশ ব্রহ্মচারী, লীলারাজ গৌরদাস ব্রহ্মচারী, মুকুন্দ ভক্তিদাস ব্রহ্মচারী, রাসবিহারী কৃষ্ণ চন্দ্র দাস, অধ্যাপক স্বদেশ চক্রবর্তী, দুলাল চন্দ্র দে ও চন্দন দাশসহ আরো অনেকে।

এমএ/ জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর